Saturday, December 6, 2025

চৌগাছায় টিকা নিতে আগ্রহ বাড়ছে, কমেছে করোনা শনাক্তের হার

যশোরের চৌগাছায় একদিকে সাধারণ মানুষের মাঝে টিকা নিতে আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে অন্যদিকে কমছে করোনা শনাক্তের হার। এতে করে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন চৌগাছার মানুষ। চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে এমনটিই উঠে এসেছে।

সূত্র জানায়, জুলাই মাসে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২ দিনে করোনা পরীক্ষার নমুনা নেয়া হয়েছে ৯৩১ জনের। যার মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ৩৬০ জনের। মাসের ২, ৫, ৯, ১৬, ২০, ২১, ২২, ২৩ ও ৩০ তারিখে সাপ্তাহিক ও ঈদের ছুটিতে নমুনা নেয়া হয়নি। এ মাসে উপজেলায় করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন ৪ জন। এছাড়া উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৫ জনের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, জুলাই মাসে নেয়া ৯৩১ জনের মধ্যে করোনা শানাক্ত হয় ৩৬০ জনের। গড় শনাক্তের হার ৩৮.৬৬ ছিল শতাংশ। এরমধ্যে ১৩৬ জনের শনাক্ত হয় হাসপাতালে র‌্যাপিড পরীক্ষায়। অন্য ২২৪ জনের শানাক্ত হয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে আরটিপিসিআর ল্যাবে।
জুলাই মাসের প্রথম ৭দিনে (১, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১০ জুলাই) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ২৯৫ জন করোনা নেয়া হয়। এতে শনাক্ত হয় ১১৮জনের। যার ৪০ জনের শনাক্ত হয় র‌্যাপিড পরীক্ষায়। অন্য ১১৪ জনের যবিপ্রবি’র আরটিপিসিআর ল্যাবে। প্রথম ৭দিনে উপজেলায় শনাক্তের হার ছিল ৫২.২০ শতাংশ। জুলাইয়ের শেষ ৭ দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা নেয়া হয় ২৮৬ জনের। এতে করোনা শনাক্ত হয় ৯২ জনের। এরমধ্যে র‌্যাপিড পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ৪৭ জনের। অন্য ৪৫ জনের শনাক্ত হয় যবিপ্রবি’র আরটিপিসিআর ল্যাবে। জুলাইয়ের শেষ ৭ দিনে (২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩১ জুলাই) শনাক্তের হার নেমে দাড়িয়েছে ৩২.১৬ এ।
এছাড়া আগস্টের প্রথম তিন দিনে নমুনা নেয়া হয়েছে ১১৪ জনের। এরমধ্যে ১ জুলাইয়ের ৩৮ নমুনায় র‌্যাপিড পরীক্ষায় ৪ জন এবং যবিপ্রবি জিনোম সেন্টারে ৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ২ জুলাইয়ের ৩৩ নমুনায় র‌্যাপিড টেস্টে ৫জন এবং জিনোম সেন্টারে ২ জন, ৩ জুলাইয়ের ৪৩ নমুনায় র‌্যাপিড টেস্টে ৩ ও জিনোম সেন্টারে ৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ৪ জুলাইয়ের ২৭ নমুনায় র‌্যাপিড টেস্টে ৫ জন এবং ৫ জুলাইয়ের ২০ নমুনায় ৩ জনের র‌্যাপিড টেস্টে করোনা শনাক্ত হয়েছে। ৩৭টি নমুনা যবিপ্রবি জিনোম সেন্টারে পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছাঃ লুৎফুন্নাহার লাকি বলেন, জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে শনাক্তের হার কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নমুনা রেজিষ্ট্রেশন করে বেলা ১২টা থেকে নমুনা নেয়া হয়। নমুনা নিয়ে হাসপাতালে র‌্যাপিড পরীক্ষায় যাদের শনাক্ত হয় তাদের তখনই কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। অন্য নমুনাগুলো যবিপ্রবি’র জিনোম সেন্টারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

সূত্র আরও জানায়,  সর্বশেষ সাতদিনে প্রতিদিন গড়ে ২৬০ জন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে টিকা নিয়েছেন। উপজেলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার ব্যক্তি টিকা নেয়ার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করে এসএমএস পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে ১২ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ১৭দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে টিকা নিয়েছেন ৩ হাজার ৭৭৮ জন। সিনোফার্মার টিকা আসার পর প্রথম ৭দিন ১২ জুলাই ২৮ জন, ১৩ জুলাই ৮৪, ১৪ জুলাই ১২৪, ১৫ জুলাই ১৬৮, ১৭ জুলাই ১৮৬ এবং ১৮ জুলাই টিকা নেন ১৬৬ জন। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা। শেষ ৭দিন ২৯ জুলাই ১৭৮, ৩১ জুলাই ২৭৮, ১ আগস্ট ২৬৬, ২ আগস্ট ২৭৮, সর্বশেষ ৩ আগস্ট ২৩৪ জন, ৪ আগস্ট ৩৪০ জন এবং সর্বশেষ ২৪৬ জন টিকা নিয়েছেন ।
সোমবার দুপুর ১ টা ৪৬ মিনিটে হাসপতাল থেকে টিকা নেন শহরের ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রথম দিকে টিকা দেয়া নিয়ে নানা রকম শংকা ছিল। এজন্য টিকা নিতে একটু দ্বিধা করছিলাম। আমার শরীরে কিছু সমস্যা থাকায় নিয়মিত ভারতে চিকিৎসার জন্য যাই। করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্টে দেখলাম যারা টিকা নিয়েছিলেন তাদের দু’একজনের করোনা হলেও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
রোববার টিকা নেয়া শহরের নিরিবিলি পাড়ার বাসিন্দা সুব্রত রায় বলেন, আমার ছোট ভাই কম্পিউটারে রেজিষ্ট্রেশন করেছে। হাসপতাল থেকে টিকা নিয়েছি। কোন বিড়ম্বনা হয়নি। টিকা নেয়ার পর শরিরে তেমন কোন সমস্যা দেখা যায়নি।
হাজরাখানা গ্রামের ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মিলন বলেন, আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যেন সহজে টিকা নিতে পারেন সেজন্য স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তা নিয়ে একদিনে ৬০০ জনের রেজিষ্ট্রেশন করে দিয়েছি।
এদিকে আগামী ৭ আগস্ট উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে সাধারণ মানুষকে টিকা দেয়ার ঘোষণায় গ্রামের মানুষের মধ্যে টিকা নিতে উৎসাহ দেখা গেছে। উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের টেঙ্গুরপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন আমরা গ্রামের বাসিন্দা। প্রযুক্তির ব্যবহার সেভাবে বুঝিনা। ৭ তারিখে ইউনিয়ন পরিষদে টিকা দেয়া হবে। সেখানে যেয়ে টিকা নেব। ইউনিয়ন পরিষদে যেয়ে টিকা নেয়ার ইচ্ছার কথা জানান স্বরুপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা গ্রামের মোঃ মিঠু, সিংহঝুলি গ্রামের টনিরাজসহ আরো কয়েকজন।
এ বিষয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছাঃ লুৎফুন্নাহার লাকি জানান, টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এসএমএস না পেলেও অনেকে টিকা নিতে হাসপাতালে আসছেন। তিনি জানান যে টিকা পেয়েছেন তাতে ৫ হাজার ৪ জনের টিকা যাওয়ার কথা। এরমধ্যে ৩ হাজার ৭৭৮ জন টিকা নিয়েছেন। তিনি আরও জানান ৭ আগস্ট উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে যেয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা দেবেন। টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩টি করে টিম একদিনে ৬শ টিকা দেবে। সে হিসেবে ৭ আগস্ট একদিনে উপজেলার ৬ হাজার ৬শ জন মানুষকে টিকা দেয়া হবে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও টিকা প্রদান অব্যহত থাকবে।

এদিকে,যশোরের চৌগাছায় ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদানের বিষয়ে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় উপজেলা পরিষদ হল রুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকৌশলী এনামুল হক এর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রকৌশলী কাফি বিন কবির, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছাঃ লুৎফুন্নাহার লাকি, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফুর রহমান, ডা. মাসুম বিল্লাহসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ এবং যেসব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে করোনা ভাইরাসের টিকাকেন্দ্র করা হয়েছে সেসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আগামী ৭ আগস্ট করোনা ভাইরাসের টিকা ক্যাম্পেইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর