Saturday, December 6, 2025

নিজ এলাকায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে চান ভারত ফেরতরা

ভারতে যাতায়াত নিষিদ্ধের পর যারা বেনাপোল হয়ে দেশে ফিরছেন তাদের রাখা হচ্ছে যশোরের বিভিন্ন হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। কিন্ত শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভারতে চিকিৎসা শেষে ফেরা এসব মানুষ কোয়ারেন্টাইনে অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা দুর্ভোগের কথা বলছেন। তারা চাইছেন তাদের যশোরে না রেখে নিজ এলাকায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হোক।

এছাড়া কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় আতঙ্কবোধ করছেন হোটেল কর্মচারীরা। প্রশাসন বলছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ রোধে এ কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা।

যশোর জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো.তমিজুল ইসলাম খান জানান, গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২ শ’ জন ভারত থেকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরেছেন। সবাই বিশেষ বিবেচনায় এসেছেন। তাদের প্রথমে বেনাপোলের বিভিন্ন হোটেলে রাখা হয়। এরপর সেখানে আর স্থান না হওয়ায় যশোরের ১৬টি হোটেলে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর স্থান সংকুলান হচ্ছে না এ বিবেচনায় সরকারের সিদ্ধান্ত ও বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে একটি সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী চারটি জেলায় কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছি। এরমধ্যে নড়াইলে ১ শ’ পাঠিয়েছি এবং খুলনাতে ১৫০ জনের মতো পাঠিয়েছি। খুলনায় আরো পাঠাবো। এছাড়া সাতক্ষীরায় এবং ঝিনাইদহে পাঠানো হবে।

হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা কয়েকজন

হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা কয়েকজন

তিনি আরো বলেন, কোয়ারেন্টাইনে যাদের রাখছি তাদের জন্য আমরা হোটেল পাহারার ব্যবস্থা করছি। তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমাদের মেডিকেল টিম সেখানে যাচ্ছে এবং তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের এখানে স্থলবন্দর আছে। এখান থেকে ভারতে লোকজন যাওয়া আসা করে। কাজেই এই এলাকাটা, বিশেষ করে ভারতের সেই ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশ করে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক।

এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসায় ভারতে গিয়ে ফেরা এসব মানুষ হোটেলে থাকতে গিয়ে অর্থনৈতিক সংকটসহ নান দুর্ভোগে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। দাবি করেছেন আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা।

যশোরের হোটেল ম্যাগপাইয়ে অবস্থানকারী চাপাইনবাবগঞ্জের গোলাম জীবন কাদের বিশ্বাস বলেন, তার মায়ের হার্টের সমস্যা এবং তিনি নিজে কিডনি রোগী। তাকে বেছে বেছে খাবার খেতে হয়। সয়াবিন তেলের খাবার তার জন্য চিকিৎসকের নিষেধ। কিন্তু যশোরে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে তার কিছুই হচ্ছে না। তার মায়ের শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসকের প্রয়োজন। কিন্তু তিনি সে সহায়তা পাচ্ছেন না।

খুলনার ডুমুরিয়ার সুমন সরকার বলেন, পায়ের রানের হাড়ের সংযোগস্থলে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ভারতে চিকিৎসায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন তার কোনো মতেই হোটেলে খরচ করে থাকার মতো সঙ্গতি ন্ইে। কিন্তু তিনি বাধ্য হচ্ছেন।

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের বর্ণ আক্তার জানান, তার অটিস্টিক শিশু সন্তানের চিকিৎসায় ভারতে গিয়েছিলেন। ছেলেকে সামলানো খুব কঠিন, এ কারণে স্বামী সন্তানসহ তারা ছয় জন ভারতে গিয়েছিলেন। এত মানুষ হোটেলে থাকা খাওয়ার ব্যয় বহনে তারা অসহায় বোধ করছেন।

হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা এ মানুষগুলোর দাবি তাদের নিজ নিজ এলাকায় রাখা হোক। তারা সেখানেই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে চান। তাহলে আর ভোগান্তি থাকবে না।

যশোরের ম্যাগপাই হোটেলের ব্যবস্থাপক আশিকুজ্জামানসহ একাধিক কর্মী বলেন, তাদের হোটেলে ২৭ জনকে রাখা হয়েছে। তাদের সেবা দিচ্ছেন তারা। কিন্তু তাদের জন্য কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। তারা তাদের মতো করে শুধু মাস্ক ব্যবহার করছেন। প্রশাসন থেকে তাদের কোনো সর্তকতা অবলম্বনের কথা ও ব্যবস্থা করা হয়নি।

যশোরের সিভিল সার্জন ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব শেখ আবু শাহীন বলেন, ভারত থেকে ২৬ এপ্রিলের পর যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন তাদের মধ্যে যারা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের আমরা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করে দিচ্ছি। বাকিরা সবাই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। যশোর এবং বেনাপোলের হোটেল ও ঝিকরগাছার গাজীর দরগাহ মাদরাসায় রয়েছেন। এছাড়ার নড়াইলেও রয়েছেন। খুলনাতেও পাঠানো হচ্ছে। এপ্রিল মাসে ৩৫ জন করোনা পজেটিভ রোগী এসেছে। এর মধ্যে ২৬ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচজন পজিটিভ রোগী এসেছে। তাদের সবাইকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।তিনি আরো বলেন, কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।

বিশেষ প্রতিনিধি

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর