খুলনা প্রতিনিধি: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে ভেড়ার জাত উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা প্রকল্প পরিচালিত করছেন।
এরমধ্যে এই গবেষণা প্রকল্পের আওতায় উন্নত জাতের ২০টি ভেড়ার বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। এগুলো আরো ৩-৪ মাসের মধ্যে বাজারজাত করার উপযোগী হবে। ভেড়ার মাংসের চাহিদা ইউরোপ-আমেরিকায় সর্বাধিক। এসব দেশে প্রথম পছন্দ ভেড়ার মাংস, ফলে অন্যান্য মাংসের চেয়ে ভেড়ার মাংসের দাম বেশি। বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে ভেড়ার মাংস আলাদা বিক্রি হয় না। ভেড়ার মাংসকে খাসির মাংস হিসেবে বিক্রি করা হয়। এই গবেষণা প্রকল্পের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে দেশে ভেড়ার মাংস জনপ্রিয় করা।
গবেষক প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম জানান, দেশে খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা। সেক্ষেত্রে উন্নতজাতের ভেড়ার চাষ বা পালন সম্প্রসারণ করতে পারলে একদিকে মাংসের চাহিদা পূরণ হবে এবং ভোক্তারা খাসির মাংসের বিকল্প ভেড়ার মাংস ক্রয় করতে পারবেন। এছাড়া উপকূলীয় এক ফসলি এলাকায় বা অন্যত্র চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। শিক্ষিত যুবকরা এই ভেড়া চাষের উদ্যোক্তা হতে পারেন। খামার গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।
মূলত গাড়োল জাতের পুরুষ ভেড়ার সঙ্গে স্থানীয় স্ত্রী ভেড়ার ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে দেশীয় ভেড়ার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের মাঠে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম এ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে উক্ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। গবেষণা কার্যক্রম শেষ হলে উন্নত সংকর জাতের ভেড়া পাওয়া যাবে। এছাড়া স্থানীয় ও সংকর জাতের ভেড়ার জন্য খাদ্য ব্যবস্থাপনার একটি নির্দেশনাও পাওয়া যাবে।
জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ভেড়া রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে ভেড়া উৎপাদন বেশ জনপ্রিয়। ভেড়া মূলত দরিদ্র কৃষক এবং মহিলারা সনাতন পদ্ধতিতে কোনো প্রকার পরিপূরক খাদ্য ছাড়াই লালন-পালন করে থাকেন। ভেড়া পালনের বিশেষ সুবিধা হলো এরা ছাগলের মতো গাছকে ধ্বংস করেনা। ভেড়া বছরে দু’বার একাধিক বাচ্চা জন্ম দেয় এবং চিংড়ি খামার সম্প্রসারণের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে চারণভূমি কম রয়েছে। এর ফলে এই অঞ্চলে গবাদি পশু এবং মহিষের উৎপাদনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেড়াগুলো নিম্নমানের এবং ছোট চারণভূমি যেমন রাস্তার ধারে এবং চিংড়ি খামারের বাঁধের উপর চরে তাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে পারে। ভেড়ার উৎপাদন ক্ষমতা সাধারণত তাদের জিনগত গুণমান, খাদ্যের মান ও পরিমাণ এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের উপকূলীয় স্থানীয় ভেড়ার উৎপাদনশীলতা তুলনামূলকভাবে কম যেমন এদের বৃদ্ধির হার ও প্রাপ্ত বয়স্ক ওজন উভয়ই কম তবে এদের বাচ্চা উৎপাদন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।
বিষয়টি মাথায় রেখে গ্রান্ট অব এ্যাডভ্যান্সড রিসার্চ ইন এডুকেশন (জিএআরই) ও বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) অর্থায়নে ‘যথাযথ প্রজনন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ভেড়ার উন্নয়ন’ শীর্ষক ৩ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পটি শুরু হয়।

প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক ও খুবির এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয় ভেড়ার তুলনায় গাড়োল জাতের ভেড়ার (মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় পাওয়া যায়) বৃদ্ধির হার এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ওজন বেশি। তাই গাড়োল জাতের পুরুষ ভেড়ার সঙ্গে স্থানীয় স্ত্রী ভেড়ার ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে এর উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। স্থানীয় জাতের ভেড়ার উৎপাদনশীলতার উন্নতির জন্য ক্রস ব্রিডিং একটি ভালো হাতিয়ার হতে পারে।
তিনি বলেন, ভেড়ার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য নির্ধারণ, চারণের জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ ও পরিমিত পরিমাণ খাদ্য নির্ধারণ অত্যন্ত আবশ্যক। উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে চলমান গবেষণাটি সঠিক প্রজনন এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশীয় ভেড়ার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য খুবির এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের মাঠে গবেষণা কার্যক্রম চলছে।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের শুরুতে বিশেষজ্ঞ, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, ভেড়ার খামারি ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে প্রারম্ভিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ভেড়ার উৎপাদন ক্ষমতা এবং পালনের সার্বিক অবস্থা জানার জন্য উপকূলীয় তিনটি উপজেলা যেমন, শ্যামনগর, দাকোপ এবং মোংলায় জরিপকার্য পরিচালনা করা হয়। এরমধ্যে স্থানীয় উপকূলীয় ভেড়া এবং গাড়োল জাতের ভেড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২০টি সংকর জাতের ভেড়া জন্ম নিয়েছে যাদের জন্মকালীন ওজন এবং বৃদ্ধির হার অনেক ভালো। গবেষণা শেষ হলে উন্নত সংকর জাতের ভেড়া পাওয়া যাবে। এছাড়া স্থানীয় ও সংকর জাতের ভেড়ার জন্য খাদ্য ব্যবস্থাপনারও একটি দিক নির্দেশনা পাওয়া যাবে।







