Friday, December 5, 2025

স্ত্রীর পেটে চতুর্থ সন্তান, আরো দুই বিয়ে করলেন স্বামী

সৈয়দ নাইমুর রহমান ফিরোজ, নড়াইল প্রতিনিধিঃ সারা বিশ্বে যখন ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে, তখন এক নারী পিপাসু স্কুলশিক্ষক স্বামীর অমানবিক নির্যাতনে হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ফারজানা বেগম (৩৪)। বর্তমানে নির্যাতিত ওই নারী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের চারিখাদা গ্রামে নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। ফারজানার স্বামী শাহান শাহ সরদার একমাস আগে তার এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। এটি তার তৃতীয় বিয়ে।
জানা গেছে, মাইজপাড়া ইউনিয়নের চারিখাদা গ্রামের সবদার সরদারের ছেলে মাইজপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক শাহান শাহ সরদারের সাথে ২১ বছর আগে ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার আব্দুল কাদিরের মেয়ে ফারজানার বিয়ে হয়। তাদের ঘরে তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে শাহজাদী মারিয়া এইচএসসি, মেজ মেয়ে শাহ আফরিন নবম শ্রেণি এবং ছোট মেয়ে ফাতেমা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বর্তমানে নির্যাতিত ওই নারী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফারজানা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই আমার স্বামীর বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর তথ্য জানতে পারি। যেহেতু বিয়ে করেছি সেকারণে সবকিছু মুখ বন্ধ করেই সহ্য করে এসেছি। বিয়ের ৪-৫ বছর পর ২০০৫ সালে পলি নামে এক মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ে করে শাহানশাহ। পরবর্তীতে পরিবার ও আমার অনুরোধে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে সংসারে কিছুটা শান্তি ছিল। কিন্তু মাঝেমধ্যেই নারীঘটিত বিভিন্ন অভিযোগ শুনলেও সেগুলো সহ্য করেছি।
সর্বশেষ এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি মাইজপাড়া ইউনিয়নের কল্যাণখালী গ্রামে মারিয়া নামে তার এক ছাত্রীকে তৃতীয় বিয়ে করে। গত ৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে আসে এবং ঘরে তুলতে চায়। তখন বাধা দেয়ায় স্বামী শাহানশাহ সরদার, তার তৃতীয় স্ত্রী মারিয়া ও আমার শ্বশুর সবদার সরদার মিলে আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। আমাকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। তখন আমার মেয়েরা ঠেকাতে গেলে তারাও রক্ষা পায়নি। আমার গর্ভে ৮ মাসের সন্তান রয়েছে। পেটে লাথি মারায় ব্লিডিং শুরু হয়। অমানবিক নির্যাতনের কারণে আমি অচেতন হয়ে যাই।
নির্যাতিতার মেজ মেয়ে শাহ আফরিন বলেন, আমার মাকে মারপিটের কারণে প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে। আমরা তিনবোন অ্যাম্বুলেন্স খবর দিয়ে রাতে মাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখানোর পর অবস্থা খারাপ হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। রাত ২টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। বর্তমানে চিকিৎসা চলছে।
মেয়ে আফরিন আরও বলেন, এ ঘটনার পর আমাদের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আমার বাবা। আমরা এখন কোথায় উঠব ভেবে পাচ্ছি না। তাছাড়া নানাভাবে আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। আমার বাবা হলেও তিনি অপরাধী। এ পর্যন্ত আমার বাবার দ্বারা অন্তত ২৫ জন নারী কলঙ্কিত হয়েছে। আমরা সঠিক বিচার চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক শাহানশাহ সরদার মুঠোফোনে বলেন, আমি তৃতীয় বিয়ে করায় আমার প্রথম স্ত্রী পরিকল্পিতভাবে এসব করেছে।
নড়াইল সদর থানার ওসি মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে থানায় কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর