বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে যশোরের মণিরামপুরে আজ উদ্বোধন করা হচ্ছে বাল্য বিয়ে নিরোধে তৈরি সিএমপি মোবাইল অ্যাপের। মণিরামপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেবা সহজীকরণের অংশ হিসেবে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে চাইল্ড ম্যারেজ প্রিভেনশন (সিএমপি) অ্যাপ উদ্বোধন করা হচ্ছে। তথ্য ভান্ডারে যুক্ত করা হয়েছে উপজেলার ১৭ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রীদের। বাল্য বিয়ের সংবাদ আসার সাথে সাথে তথ্য ভান্ডার থেকে নাম, পিতার নাম, শ্রেণি, বিদ্যালয়ের নামসহ সকল তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেয়ে যাবেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা। উদ্যোক্তারা আশা করছেন অ্যাপের মাধ্যমে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা পাবেন অংশীজনেরা।
বিশ্বে বাল্য বিয়ের সর্বোচ্চ হারের দিক থেকে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতি তিনটি বিয়ের মধ্যে দু’টি বাল্য বিয়ে হয় বলে এক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে,বাল্য বিয়ের কারণে মাতৃ মৃত্যু হার বেশি হয় এবং স্বামীর ঘরেও স্ত্রীদের মানবেতর হয়। বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন থাকা সত্ত্বেও এ হার কমানো এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত। ভুক্তভোগীদের অনেকেই বাল্য বিয়ে বন্ধে প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রাপ্তি ক্ষেত্র বিশেষ বিলম্বিত যোগাযোগ ও সময় সংক্ষিপ্ততাকে দায়ী করেন। সেই সব সমস্যার সমাধানে দ্রুত সেবা প্রদানে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে চাইল্ড ম্যারেজ প্রিভেনশন (সিএমপি) মোবাইল অ্যাপ থাকছে মণিরামপুর উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ুয়া ১৭ হাজার ছাত্রীদের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য। তথ্য ভান্ডারে আছে প্রতিটি ছাত্রীদের জন্য স্বতন্ত্র প্রোফাইল ব্যবস্থাপনা। মণিরামপুর উপজেলার যে কোনো প্রান্ত থেকে আসা তথ্য এবং ১০৯ নম্বরের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আসা ফোন কলের সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের কাছে মোবাইল অ্যাপসে নোটিফিকেশনসহ মোবাইলে এস এম এস চলে যাবে, চাইলে কলও করা যাবে। বাল্য বিয়ে বিষয়ক তথ্য পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একইসাথে গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে ঊর্ধ্বতনকে অবহিত করতে পারবেন। ফিডব্যাক দিতে পারবে। চাইল্ড ম্যারেজ প্রিভেনশন (সিএমপি) মোবাইল অ্যাপে সার্বক্ষণিক যুক্ত থাকবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, উপজেলার সহকারী প্রোগ্রামার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট পুলিশ ফাঁড়িসহ প্রশাসনের অন্যরাও।
উদ্যোগটির বিষয়ে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, ‘বাল্য বিয়ে একটি সামাজিক বর্বরতা। আশা করছি সিএমপি অ্যাপের মাধ্যমে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবো। তবে এক্ষেত্রে জনগণকেও সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে।’ এই উদ্যোগটি নিতে উৎসাহ প্রদান করেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার সহধর্মিণী বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য, তত্ত্বাবধান করেছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। কর্মযজ্ঞে সরাসরি যুক্ত থেকেছেন সতের হাজার ডাটা সরবরাহকারী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামারসহ অন্যরা।
সবার সম্মিলিত প্রয়াসে যশোরের মণিরামপুর উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগটি সফল হবে এবং এই সবখানে ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাতদিন সংবাদ







