২০১৭ সালের ৩১ জুলাই যশোরে এসেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ওইসময় তিনি যশোরের আইনজীবীদের জন্য ১০ তলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বলেছিলেন, শিগগির কাজ শুরু হবে। কিন্তু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের তিন বছর আট মাস পার হলেও ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। শুরু হয়নি কোনো কাজই। কবে নাগাদ আইনজীবীদের স্বপ্নের ভবনের কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে সঠিক কিছুই জানেন না সমিতির নেতৃবৃন্দ।
আইনজীবী নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির দু’টি ভবন রয়েছে। সমিতিতে নিয়মিত সদস্য রয়েছেন চারশ’৭৪ জন। শিক্ষানবীশ আইনজীবী এবং বারকাউন্সিলে ইন্টিমেশন জমাদানকারী রয়েছেন আরও শতাধিক। যারা আইন পেশায় নিয়মিত প্রাকটিস করেন। তাদের বাইরেও কিছু সহযোগী আইনজীবী রয়েছেন যারা মাঝে মাঝে আসেন। আর মোহরার রয়েছেন প্রায় চারশ’র উপর। কিন্তু দু’টি ভবনে কক্ষ রয়েছে মাত্র একশ’২০ টি। হলরুম রয়েছে তিনটি। পর্যাপ্ত কক্ষ না থাকায় ঠাসাঠাসি করে চার থেকে পাঁচজন আইনজীবী একসাথে বসছেন। আইনজীবী,শিক্ষানবীশ আইনজীবী আর মোহরারদের ভিতরে সেবাগ্রহীতারা দাঁড়ানোর জায়গা পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ আদালত চত্বরের আশপাশের অফিস ভাড়া করে কাজ চালাচ্ছেন। আইনজীবীদের অনেকে আবার কোথাও কোনো জায়গা না পেয়ে জজ আদালতের পশ্চিম পাশে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে কাজ চালাচ্ছেন। সেখানে একটু বৃষ্টি হলেই নথিপত্র হাতে নিয়ে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াতে হতে হয় তাদের। এতে করে আইনজীবীদের সাথে সেবা প্রত্যাশীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে করোনার এ সময় তারা বিপাকে ও ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে অন্তত ১০ জন সেবা প্রত্যাশীর সাথে কথা বললে তারা জানান, একটি চেম্বারে অন্তত তিন-চারজন আইনজীবী বসেন। অনেক সময় চেম্বারে গেলে নিজের আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে অন্যরা নানা ধরনের হয়রানি করেন। অনেক সময় আইনজীবীদের নানা কথায় বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় বলেও জানান তারা।
ভিত্তিপ্রস্তরের ১৪ মাস পর ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে প্রশ্নত্তোর পর্বে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন অচিরেই বরাদ্দ পাওয়া যাবে। সেই বক্তব্যের আড়াই বছর পার হলেও ১০ তলা ভবনের কাজ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। ভবন নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে চলছে অস্থায়ী চায়ের দোকান, হোটেল এবং সাইকেল গ্যারেজে। এসব বিষয়ে কথা হয় যশোরের সিনিয়র কয়েকজন আইনজীবীর সাথে। তারা বলেন, এতোদিন শুনে আসছেন অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। কিন্তু কার্যত কোনো কাজই হচ্ছে না। এ কারণে হতাশা ব্যক্ত করেন কেউ কেউ।
আবার কেউ বলেন, এ পর্যন্ত সমিতির নেৃতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে চারবার। নির্বাচনের আগে শীর্ষ নেতাদের প্রতিশ্রুতি থাকে কাজ শুরু করার। জয়ী হয়ে সাধারণ আইনজীবীদের দুর্ভোগের কথা ভুলে যান। আবার কেউ কেউ বলছেন এটা তাদের ব্যর্থতা। সরকারি বরাদ্ধের দোহাই দিয়ে কাজ বন্ধ রাখা হচ্ছে। সমিতির মোটা অংকের ফান্ড রয়েছে। কাজ শুরু করলে অবশ্যই অনেকেই এগিয়ে আসবে। কিন্তু শুরু করার মানসিকতা কারো মধ্যে পাওয়া যাচ্ছেনা। এ বিষয়ে কথা হয় ২০১৭ সালের সাধারণ সম্পাদক এমএ গফুরের সাথে। তিনি বলেন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় মন্ত্রী আইনজীবীদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন খুব শিগগির কাজ শুরু হবে। কিন্তু একাধিকবার দৌড়ঝাঁপ করেও লাভ হয়নি। ২০১৯ সালে থাকা সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা ছোট বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে বহু ডকুমেন্ট চেয়েছিল। তারা দিয়েছিলেন। এ নিয়ে ঢাকায় একাধিকবার যানও। নকশাও করা হয়েছিল। পরে এ কাজের অগ্রগতি হয়নি। এ বিষয়ে ২০১৮ সালের ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শাহানুর আলম শাহীন বলেন, ২০১৮ সালেও তিনি বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন। এবার দায়িত্ব নিয়েও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন। আইনমন্ত্রীর সাথে তার কথা হয়েছে। খুব শিগগির কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বর্তমান সভাপতি কাজী ফরিদুল ইসলাম জানান, চার বছরেও কাজ শুরু না হওয়াটা দুঃখজনক। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সবাইকে। এবারের কমিটি বিষয়টি নিয়ে জোরেসোরে নেমেছে।
রাতদিন সংবাদ







