Friday, December 5, 2025

অভয়নগরে সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে ঘুরছেন বিসিএস নারী কর্মকর্তা

পিবিআইয়ের তদন্ত ও আদালতের দৃষ্টিতে চিহ্নিত অপরাধী হয়েও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে মইনুল নামের এক মহা প্রতারক। তার  ঔরসজাত সন্তান নিয়ে এক বিসিএস নারী কর্মকর্তা ঘুরছেন পথে পথে। অরো কয়েক নারী প্রতারিত হবার খবরও পাওয়া গেছে । কিন্তু গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বুক ফুলিয়ে এলাকায় ঘুরলেও অভয়নগর পুলিশ তাকে ‘খুঁজে পাচ্ছেনা’ ।
অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া প্রফেসরপাড়ার আলতাফ হোসেনের ছেলে মইনুল ইসলাম। তিনি ব্যবহার করেন একাধিক মোবাইল ফোন। চালচলনে রাজকীয় ভাব। নিজেকে কখনো ডিজিএফআই কর্মকর্তা, কখনো বড় কোনো প্রতিষ্ঠানের এমডি পরিচয় দেন। বিত্তশালী মেয়েরাই তার টার্গেট। উদ্দেশ্য বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া। প্রভাবশালী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মেয়ের পরিবারের সাথে গড়ে তোলেন সম্পর্ক। এরপর বিয়ের প্রলোভন দেন। এক পর্যায়ে ছলেবলে টাকা হাতানো শুরু করেন তিনি। প্রতারক মইনুলের বিষয়ে এ ধরনের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রয়েছে।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুাল-১ এ মামলা করেন যশোরের প্রতারিত এক নারী বিসিএস কমকর্তা। বিচারক টিএম মুসার নির্দেশে মামলায় বাদীর নানা অভিযোগ তদন্তে মাঠে নামে যশোর পিবিআই। একপর্যায়ে বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। গত ৩ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ২০১১ সালে বিয়ে হওয়া মামলার বাদীর ঢাকায় যাতায়াতের সুবাদে ২০১৩ সালে মইনুলের সাথে পরিচয় হয়। মইনুল নিজেকে পরিচয় দেন ডিজিএফআই কর্মকর্তা হিসেবে। এক পর্যায়ে তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠলে নারী কর্মকর্তাকে ঢাকার বাড়িতে নিয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে মইনুল শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এর  জেরে ওই নারীর গর্ভে আসে সন্তান। পরে তার সাথে স্বামীর বিচ্ছেদও হয়। মামলা চলাকালীন আদালতের কাছে ডিএনএ টেস্টের অনুমতি চায় পিবিআই। ফলে ওই নারী কর্মকর্তা, তার তালাকপ্রাপ্ত স্বামী, উক্ত সন্তান ও মইনুলের ডিএনএ টেস্ট করার পর প্রমাণ মেলে সন্তানটি মইনুলের। পিবিআই প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করেন এসআই মিজানুর।
পরে আদালত চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি প্রতারক মইনুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। অভয়নগর থানায় গ্রেফতারী পরোয়ানা পৌঁছাতেই মইনুল আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একই সাথে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে বুকফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল অহেদ-২ বলেন শুধু একজনকে নয়, একাধিক নারীর সাথে রয়েছে মইনুলের সম্পর্ক। সুদর্শন চেহারা, ডাটবাট ও নানা প্রলোভনে আসক্ত করতে পটু হওয়ায় সহজেই মইনুলের প্রলোভনে মেয়েরা পটে যায়। খুলনা ফুলতলায় তার একটি অফিস রয়েছে। সেই অফিসের এক নারী স্টাফের সর্বনাশ করেছেন তিনি। খুলনা বটিয়াঘাটার এক মেয়েরও এ ধরনের সর্বনাশ করেছেন। এ বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১ এর পিপি সেতারা খাতুন বলেন, অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে মামলাটি দ্রুত এগিয়েছে। আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। মইনুলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে রাষ্টপক্ষ গুরুত্বের সাথে  কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী জানান, তাকে বিয়ের কথা বলে মাইশা নামের আরেক মেয়েকে মইনুল বিয়ে করে। এ অবস্থায় তিনি শিশু সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। এ বিষয়ে আদালত ও পিবিআই তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে কিন্তু অভয়নগর থানা পুলিশ তার সাথে নানা ধরনের তালবাহানা করছে। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অভয়নগর থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট হাতে পেয়েছি তাকে খুঁজে পাচ্ছিনা,উত্তরা এলাকায় রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। উত্তরা থানায় ওয়ারেন্ট রিকুজেশন পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।
রাতদিন সংবাদ
আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর