Friday, December 5, 2025

অভয়নগরে ক্ষমতার জোরে বিধবার বসতবাড়ি ভাঙ্চুর ও উচ্ছেদ

অভয়নগর প্রতিনিধি:‘প্রধানমন্ত্রী করে আশ্রায়ন-নেতাকর্মী করে আশ্রয়হীন’।যশোরের অভয়নগরে প্রভাবশালীর দ্বারা বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে তীব্র শীতের মধ্যে পাঁচ দিন যাবৎ পরিবার পরিজন নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছেন বিধবা নাছিমা বেগম। কেউ এগিয়ে আসেনি তাকে সাহায্য করতে।

গত শুক্রবার প্রভাব খাটিয়ে শ্রমিক নেতা উপজেলার একতারপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম ফারাজীর ছেলে সালাউদ্দিন হোসেন বুলবুল বসতবাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন ওই বিধবার । তিনি নিজের দখলে নেওয়ার জন্য নাছিমা বেগমকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন। উপজেলার রাজঘাট এলাকায় সড়ক ও জনপদের অব্যবহৃত জমিতে ২৬ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছিলেন নাছিমা বেগম জানান, তারা স্বামী ইউনুছ আলী একজন ফেরিওয়ালা ছিলেন। তিনি গ্রামে গ্রামে চুড়ি, ফিতা ফেরি করে বিক্রি করতেন। তিনার (স্বামী) ২১ বছর আগে ৫৭ হাজার টাকা দিয়ে স্থানীয় আদম আলী, শহর আলী ও রাজু আহমেদের কাছ থেকে দখল সূত্রে ১০ শতক জমি ক্রয় করেছিলেন। জমি ক্রয় করে তিনি টিন শেটের বাড়ি ঘর নির্মাণ করে ছিলেন। বাড়ি করার কয়েক বছর পর স্বামী দুর্বৃত্তের হাতে নিহত হয়। নাছিমা বেগম তখন থেকে দুইটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে নিয়ে পাথর ভেঙ্গে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। সালাউদ্দিন হোসেন বুলবুল ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ওই বিধবার বাড়ির পেছনে স্থানীয় একজন মালিকের কাছ থেকে তিন শতক জমি ক্রয় করেন।

কিন্তু বাঁধা হয় ওই বিধবার বসতবাড়ি। বসতবাড়ি উচ্ছেদ হলে তার জমিটিতে যানবাহন আনা নেওয়া সুবিধা হয়। যে করনে বুলবুল অনেক দিন থেকে চাপ প্রয়োগ করে আসছে ওই বিধবাকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য। তিনি বাড়ির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।
নাছিমা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, গত শুক্রবার পরিবার নিয়ে দুপুরে খাবার খাচ্ছিলেন। এমন সময় অভয়নগর, রাজঘাট শিল্পাঞ্চলের প্রভাবশালী শ্রমিকলীগ নেতা নজরুল ইসলাম ফারাজীর ছেলে সালাউদ্দিন হোসেন বুলবুল ফারাজী(৪৫) দেশীয় অস্ত্রসহ ২০ /২৫জন লোক নিয়ে তার বসত বাড়ি ভাংচুর শুরু করে। এ সময়ে বাঁধা দিতে গেলে তারা খুন যখম করতে আসে। ভয়ে ছেলেরা পালিয়ে যায। পরে তারা নির্বিঘ্নে টিনের বেড়া ও টিনের চালার বসত ঘর সহ অনান্য ঘর ভেঙ্গে চুরমার করে । এছাড়া খাবার সহ হাড়ি পাতিল গুড়িয়ে দেয়। বসতবাড়ি ফিরে পেতে দারে দারে ঘুরছে ওই মহিলা।

অভিযুক্ত সালাউদ্দিন হোসেন বুলবুল জানান, আমি ওই বিধবার বসতবাড়ির পেছনে জমি ক্রয় করেছি। ওরা সরকারি রাস্তার জায়গায় বসবাস করে। আমি কিছুদিন আগে ওই বিধার ছেলের নামে থানায় মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়েছিলাম। এ ঘটনায় থানায় বসে একটি সালিশ হয়েছিলো। সালিশে তারা একলাখ টাকার বিনিময়ে জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছিলো। আমি ওদের ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম কিন্তু ওরা জায়গা ছাড়েনি। যে কারনে আমি ওদের ঘর ভেঙ্গে দিয়েছি। আর মালামাল রাখার জন্য ছোট্ট একটি ঘর রেখেছি।
নাছিমা বেগমের দাবি, তাকে অন্য কোথাও একটু স্থায়ী জায়গা দিলে তিনি সেখানে চলে যাবেন। তিনি এখন ভাঙ্গা ঘরের অবশিষ্ট স্থানে পরিবারের ৭ জন নিয়ে গাঁদাগাদি করে শুধু রাত্রীযাপন করছেন। দুই দিন কোন রান্না হয়নি। অর্ধহারে অনাহারে কেটেছে। এখন পাশের একটি খোলা স্থানে রান্না করছেন। আর দিনের বেলায় এখানে সেখানে থাকেন। বিধবা আশংকা করছেন তাকে এলাকা ছাড়া করতে আবারো সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। এসব ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

থানার অফিসার ইনচার্য মো: তাজুল ইসলাম বলেন, বিধবা সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে অবৈধ ভাবে বসবাস করছিলো। তাদের টাকা দেওয়ার পরে ও জায়গা ছড়েনি। অতিরিক্ত টাকার দাবিতে তারা ঘর থেকে নাম ছিলো না । এ ব্যপারে স্থানীয় ভাবে আপস করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নাজমুল কুসেইন খাাঁন বলেন, সড়ক ও জনপথের অব্যাহৃত জায়গায় কোন বসতি থাকলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গার অধিকার রাখে। কোন ব্যক্তি মালিকের এ ধরনের বসতি উচ্ছেদের অধিকার নেই। এ ঘটনায় বসতি উচ্ছেদের অভিযোগে মামলা করতে হবে। থানায় মামলা না
নিলে তিনি ওই বিধবাকে সাহায্য করবেন বলে জানান।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর