Saturday, December 6, 2025

যশোরে বেকারদের টাকা ফেরত না দিয়ে ফের চাকরির প্রলোভন দিচ্ছে ইউনিক ফোর্স

চাকরির প্রলোভন দিয়ে প্রতারণা অব্যাহত রেখেছে যশোরের ইউনিক ফোর্স লিমিটেড। বেকারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত না দিয়ে তালবাহানা করছেন কর্মকর্তারা। পূর্বে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত না দিয়ে ফের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন করে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে ইউনিক ফোর্স। চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির কাছে থেকে ইউনিক ফোর্স কীভাবে এ ধরনের প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, রাতদিন নিউজে প্রতারণা সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর থেকে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ নিয়ে দপ্তরে হাজির হচ্ছেন। তাদের কেউ জমি বন্ধক দিয়ে,আবার কেউ কেউ সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে টাকা দিয়েছেন ইউনিক ফোর্সে। অথচ চাকরি পাননি। এখন ওই টাকা ফেরত চাইলে তাদেরকে সন্ত্রাসী দিয়ে নানা ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে।  অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী জামানতের রশিদ এবং এভিডেভিটের কাগজপত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শতাধিক চাকরি প্রত্যাশী ইউনিক ফোর্সে টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। পাওনা টাকা ফেরত পেতে প্রতিদিনই ইউনিক ফোর্সের অফিসে আসছেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু তাদের টাকা ফেরত না দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।  শহরের কারবালা এলাকার মেহেদি হাসান জানান, সিকিউরিটি অফিসার পদে এক বছর আগে তিনি ইউনিক ফোর্সে যোগদান করেন। ওই সময় তিনি ২০ হাজার টাকা জামানত দেন। কয়েক মাস চাকরি করলেও তাকে বেতন দেয়া হয়নি। এ কারণে বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। কিন্তু জামানতের টাকা আজও তিনি ফেরত পাননি। বেনাপোলের   দৌলতপুর এলাকার মুস্তাব আলীর ছেলে আলামিন জানান, রেলওয়ের টিটি পদে চাকরির জন্য এক বছর আগে ৩৬ হাজার পাঁচশ’ টাকা দেন।  যার রশিদও রয়েছে। কিন্তু তাকে চাকরি দেয়া হয়নি। ফেরত দেয়া হয়নি টাকাও। আজ না কাল বলে ঘোরানো হচ্ছে তাকে। একই অভিযোগ করেন শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের ইসমাইল হোসেনের ছেলে  সিরাজুল ইসলাম। তিনিও টিটি পদের জন্য সাড়ে ৩৫ হাজার টাকা দেন। এখন সেই টাকা  ফেরত পাওয়ার জন্য ধর্না ধরছেন। শার্শার গোড়পাড়া গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে  জুয়েল পারভেজ জানান, তিনিও প্রতিনিয়ত ঘুরছেন পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য। কিন্তু টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ইকরামুল নামে এক যুবক জানান, ২০ হাজার টাকা বেতনে সিকিউরিটি সুপারভাইজার পদে চাকরির কথা বলে তার কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে, কিন্তু চাকরি দেয়া হয়নি। এখন টাকাও ফেরত দেয়া হচ্ছেনা। তাকে দেখে তার পরিচিত পাঁচজন টাকা দেন। কিন্তু চাকরি জোটেনি কারও। আজ না কাল, কাল না পরশু, এ মাস না ও মাস এভাবে এক বছর পার করে দিয়েছেন ইউনিক ফোর্স কর্তারা। খাজুরার ফয়সালের কাছ থেকে ৩০ হাজার, একই এলাকার খাদিজার কাছ থেকে ছয় হাজার ও নাজিরের কাছ থেকে ১০ হাজার এবং চুড়ামনকাটির বিলাসের কাছ থেকে ৩৩ হাজার পাঁচশ’ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইউনিক ফোর্স। শহরের পালবাড়ির মোড়ের সাবেক সেনা সদস্য আসাদ জানান, ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে দু’ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে তার কাছ থেকে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও চাকরি না দিয়ে তালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করে  বেশকিছু টাকা উদ্ধার করেছেন। এক মাসের মধ্যে বাকি টাকা দেয়ার কথা থাকলেও তারা  সেই টাকা দিচ্ছে না।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ইউনিক ফোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন ও পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে যশোরের আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলা তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন যশোর। মাহামুদুল হাসান ও রাশেদুল ইসলাম নামে দু’ব্যক্তি আদালতে মামলা করেছেন। এ কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। সন্ত্রাসীদের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুংকার দিচ্ছেন।এছাড়া,পাওনাদারদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলাও করছেন ইউনিক ফোর্স লিমিটেডের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ইউনিক ফোর্সের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, তারা কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত না। একটি মহল তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

বিশেষ প্রতিনিধি

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর