খুলনা প্রতিনিধি: দেশের অর্থনীতিতে চিংড়ি শিল্পের দারুণ ভূমিকা। খুলনার প্রান্তিক চাষিদের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করছে ‘সাদা সোনা’ খ্যাত চিংড়ি। খুলনার লবণাক্ত পানিতে বিভিন্ন জাতের চিংড়ি চাষ হয়। চিংড়ি রফতানির লক্ষ্যে রূপসা নদীর আশপাশে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। প্রতি বছর হাজার হাজার টন চিংড়ি বিদেশে রফতানি করা হয়।

বর্তমানে উৎপাদন থেকে শুরু করে রফতানি পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত এ শিল্পের সঙ্গে। তবে কতিপয় দুষ্টচক্রের কবলে পড়ে এ শিল্প এখন হুমকির মুখে। বেশি মুনাফার আশায় এসব চক্র চিংড়িতে পুশ করছে অপদ্রব্য। একের পর এক অভিযানে জেল-জরিমানা করেও কোনোভাবেই তাদের থামানো যাচ্ছে না।অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলো সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে চিংড়ি সংগ্রহ করে না। তারা অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের মাধ্যমে চিংড়ি ক্রয় করে। অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা কমিশনের ভিত্তিতে চিংড়ি নেয় স্থানীয় ডিপোগুলো থেকে। বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিদের কাছ থেকে আসা চিংড়ি কারখানাগুলোতে সরবরাহ করে করে ওইসব ডিপো। খুলনার নতুন বাজার ও রূপসায় এমন সাত শতাধিক ডিপো রয়েছে। কিছু সংখ্যক ডিপোর চিংড়িতেই মূলত অপদ্রব্য পুশ করা হয়। বেশি মুনাফার আশায় কতিপয় ব্যবসায়ী চিংড়িতে এক ধরনের অবৈধ জেলি পুশ করে ওজন বাড়ায়। কয়েকটি মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আতাত করে তারা পুশ করা চিংড়ি বিক্রি করে। এসব চিংড়িতে সহজেই ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করে। এ কারণে সহজে পচন ধরে। রফতানির পর ল্যাব পরীক্ষায় অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়ায় অনেক সময় বিদেশ থেকে সেই চিংড়ি ফেরত পাঠানো হয়। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের দেশের সুস্বাদু চিংড়ির সুনাম ও বাজার নষ্ট হয়।রূপসা চিংড়ি বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু আহাদ হাফিজ বলেন, মূলত মৌসুমি ব্যবসায়ীরাই এ অসাধু চক্রের সঙ্গে জড়িত। নিয়মিত ব্যবসায়ীরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়ান না। প্রশাসনের অভিযানে এমন অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীর জেল-জরিমানা করা হয়। তবু প্রতি মৌসুমে নতুন নতুন অসাধু ব্যবসায়ী তৈরি হয়। এদের কারণে আমাদের সুনাম নষ্ট হয়।তিনি বলেন, অনেক সময় কারখানাগুলো তাদের টার্গেট পূরণ করতে কিছুটা ছাড় দেয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে চিংড়িতে জেলি পুশ করে। আবার যখন বাজারে মাছ কম থাকে তখন কয়েকটি কারখানা সরাসরি জেলি পুশ করা চিংড়ি ক্রয় করে। আমরা বারবার বাধা দিয়েও তাদের ঠেকাতে পারছি না। আমাদের সমিতির অধীন সব ব্যবসায়ীকে এ বিষয়ে নোটিশ দিয়েছি।মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শেখ মো. আব্দুল বাকি বলেন, আমাদের ২২ সদস্যের একটি কমিটি আছে। এ কমিটি কারখানাগুলোতে জেলি পুশ করা চিংড়ি কেনা হচ্ছে কিনা তা তদন্ত করে। কোথাও এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেখা গেলে আমরা জেলি পুশ করা চিংড়িসহ অপরাধীদের ধরে মৎস্য মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের খবর দেই। তারা অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করেন।তিনি বলেন, চিংড়ি রফতানির পর ব্যাকটেরিয়ার কারণে ফেরত এলে আমাদের কম হলেও ৩০-৩৫ লাখ টাকা লোকসান হয়। এ কারণে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমাদের কমিটি সবগুলো কারখানায় নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
খুলনা কার্যালয়ের মৎস্য পরিদর্শক ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার বলেন, বিদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে যেসব মাছ ফেরত আসে সেগুলোতে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। মাছের মান নিয়ন্ত্রণে আমরা কাউকে ছাড় দেই না। আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। কেউ জেলি পুশ করা চিংড়িসহ ধরা পড়লে জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ড দেয়া হবে।







