Friday, December 5, 2025

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের দলগত সম্পৃক্ততা পেয়েছে স্বাধীন তদন্ত কমিশন

ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা ও রাজনৈতিক ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যেই পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। কমিশনের দাবি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিল এবং ঘটনার মূল সমন্বয়ক ছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস।

রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ১১ মাসের তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। পরে সায়েন্স ল্যাব এলাকার বিআরআইসিএম ভবনে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান তদন্তের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

কমিশনের অভিযোগ, শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মির্জা আজম, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা এ ঘটনার বিভিন্ন দিক সমন্বয় করেছেন। তাছাড়া তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ, সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবরের নামও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিশন জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগে দীর্ঘ সময় ধরে গোপন বৈঠক ও প্রস্তুতি চলেছে। তাপস মসজিদ ও ট্রেনিং গ্রাউন্ডসহ বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করে ঘটনাটি সমন্বয় করেন। ঘটনার দিন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে পিলখানায় ঢুকে এবং পরে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ বের হয়ে যায়। কমিশনের মতে, অনেক হত্যাকারী ওই ভিড়ের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

তদন্তে ভারতের সম্পৃক্ততার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশন বলেছে, ওই সময় প্রায় ৯২১ জন ভারতীয় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল; তাদের মধ্যে ৬৭ জনের কোনো হিসাব মেলেনি। এই বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে অনুসন্ধান চাওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন সেনাপ্রধান সদর দপ্তর থেকে দূরে থাকায় এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে সময়মতো সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়নি, যা হত্যাকাণ্ডকে আরও ভয়াবহ করে তোলে। ঘটনার সময় গণমাধ্যমের কিছু অংশের ভূমিকা ছিল অপেশাদার বলে মন্তব্য করেছে কমিশন।

পিলখানায় ওই দুই দিনের হত্যাযজ্ঞে বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা এবং সর্বমোট ৭৪ জন নিহত হন। কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও নৃশংস নির্যাতনের শিকার হন।

ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রধান উপদেষ্টা প্রতিবেদন গ্রহণের সময় বলেন, দীর্ঘদিন জাতি এ ঘটনার সত্য জানতে পারেনি; কমিশন সেই অন্ধকার দূর করেছে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর