শফিয়ার রহমান, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ তিন তলা ভবনে চলছে পাঠদান। শুধু তাই নয়, একই ভবনের তৃতীয় তলায় এখনো রয়েছে ছাত্রী নিবাসও। এতে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান ও ছাত্রী নিবাস বন্ধে তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে অর্থাভাব ও পর্যাপ্ত কক্ষের সংকটের কারণে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
১৯৯৩ সালের ভবন এখন মৃত্যু ফাঁদ
মণিরামপুর পৌরশহরের মোহনপুর এলাকায় ১৯৯৩ সালে নির্মিত তিনতলা ভবনটিকে কেন্দ্র করেই কলেজটির যাত্রা শুরু। পরবর্তীতে শিক্ষার মান ও ফলাফল ভালো হওয়ায় চালু হয় স্নাতক, বিএম ও অনার্স (সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান) বিভাগ। বর্তমানে কলেজে প্রায় সাড়ে ১১শ ছাত্রী পড়ালেখা করছে।
১৯৯৯ সালে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হলেও ছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় শ্রেণিকক্ষের সংকট দেখা দেয়। ফলে পুরাতন তিনতলা ভবনেও পাঠদান শুরু করা হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ভবনটি মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে—১ম ও ২য় তলার মেঝে, দেয়াল, বিম ও ছাদে ফাটল দেখা দেয়।
ঝুঁকির মধ্যেও পাঠদান ও আবাসন
তিনতলার কিছু কক্ষ সংস্কার করে ছাত্রী নিবাস চালু করা আছে। বর্তমানে সেখানে ৫০ জন ছাত্রী অবস্থান করছে।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন জাকির বলেন, “পরিত্যক্ত ভবনে আতঙ্ক নিয়েই ক্লাস নিতে হয়।”
জীববিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্বাস উদ্দিন বলেন, “কক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে।”
ছাত্রী নিবাসে থাকা তানহা সুলতানা ও অহনা খাতুন বলেন, “ভবনে ফাটল দেখে সব সময় আতঙ্কে থাকি। কখন কী হয় বলা যায় না।”
ছাত্রী নিবাসের দায়িত্বে থাকা সহকারী অধ্যাপক মুহিবুল্লাহ মনু জানান, “এ ভবনে ছাত্রীরা নিরাপদ নয়। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় রাখতে বাধ্য হচ্ছি।”
ফায়ার সার্ভিস ও শিক্ষা প্রকৌশলের সতর্কতা
ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার শাফায়েত হোসেন জানান, “পুরাতন ভবনটি পরিদর্শন শেষে ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাদিউজ্জামান ভবনটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং তিনতলা ভবনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।
বিকল্প ব্যবস্থায়ও বাধা অর্থ সংকট
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আফরোজা মাহমুদ রানী বলেন, “অস্থায়ীভাবে অন্যত্র পাঠদানের ব্যবস্থা করা জরুরি। কিন্তু অর্থাভাবে বিষয়টি দ্রুত সম্ভব হচ্ছে না।”
গভর্নিং বডির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন বলেন, “আমরা অস্থায়ী টিনসেড নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে অর্থ সংকটের কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না জানান, “দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”







