শামীম হোসেন: যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামের অসহায় মা মণিরা খাতুন ও তাঁর তিন বছরের কন্যা আফিয়াকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া মানবিক সংকট উত্তরণের পথে আরও একধাপ অগ্রগতি হলো। শ্বেতবর্ণের কারণে বাবা-হারা আফিয়ার ডিএনএ পরীক্ষার আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া নতুন বসতঘর নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে—যা মা–মেয়ের জীবনে নতুন আশার দুয়ার খুলে দিল।
দীর্ঘদিন মানবেতর জীবনযাপন করা মণিরা–আফিয়ার দুঃখ–কষ্ট যখন গণমাধ্যমে উঠে আসে, তখনই তাদের জীবনে ফেরে আশার আলো। রাতদিন নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসে। তিনি সংবাদটি জানার পরপরই পরিবারটির সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণের নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে ১৪ নভেম্বর মা–মেয়ের হাতে উপহার তুলে দেওয়া হয়, এবং ঘোষণা আসে—একটি বসতঘর নির্মাণ করা হবে এবং শিশু আফিয়ার পড়াশোনার যাবতীয় ব্যয় দলীয়ভাবে বহন করা হবে।
কিন্তু ঘর তৈরির জন্য জমি না থাকায় প্রথমদিকে কাজ থমকে যায়। পরে ২০ নভেম্বর সামাজিক সংগঠন ‘উই আর বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা এস. এম. আকবর জমি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন। ফলে ঘর তৈরির জটিলতা কেটে যায়—স্থায়ী আশ্রয়ের পথে এগিয়ে যায় মা–মেয়ের স্বপ্ন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন শুরু হলো। নবনির্মিত ঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনয়ুরুল হক খোকন, রামনগর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আব্দুল আজিজ, যুবদল নেতাসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। স্থানীয় নেতারা জানান—দ্রুততার সঙ্গে নির্মাণকাজ শেষ করে মা–মেয়েকে একটি নিরাপদ ও স্থায়ী আশ্রয় উপহার দেওয়া হবে।
এদিকে, শিশুকন্যা আফিয়াকে শ্বেতবর্ণ (ইউরোপীয় বৈশিষ্ট্য) হওয়ার অজুহাতে অস্বীকার করে তালাক দেওয়া এবং ভরণ–পোষণ না দেওয়ায় যে সামাজিক ও আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল, তাতেও এসেছে বড় অগ্রগতি।
১৭ নভেম্বর রাতে আফিয়ার মা মণিরা খাতুন স্বামী মোজাফফর হোসেনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।
তার প্রেক্ষিতে ১৯ নভেম্বর ওই জিডির তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আফিয়ার ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন জানান।
আর ২৪ নভেম্বর আদালতও মঞ্জুর করেন ডিএনএ পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় আইনগত কার্যক্রম শুরু করার আবেদন।
কোতোয়ালি থানার এসআই ও তদন্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ হালদার জানান—আদালতের লিখিত নির্দেশনা হাতে পেলেই আফিয়া ও তার বাবার ডিএনএ পরীক্ষার কাজ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, বাবা দেশে না থাকলে দাদা বা চাচার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেও শিশুটির প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব। ডিএনএ পরীক্ষা ঢাকার মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে সম্পন্ন হবে।
পুলিশ সুপার রওনক জাহানের নির্দেশে মা–মেয়ের আইনি সুরক্ষা ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে শিশু আফিয়ার জন্য নতুন ঘর নির্মাণ এবং আইনি জটিলতার নিরসন হওয়ায় বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে স্বস্তি ও আনন্দের পরিবেশ।
অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সামাজিক সংগঠনের সহায়তা এবং সাধারণ মানুষের সহমর্মিতা—সব মিলিয়ে এই ঘটনাটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের মানবিক মূল্যবোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।







