বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনা করছে ঢাকা। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সম্প্রতি আদালত তার বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছে। তবে এই রায় বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা এখন ভারত—এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সময় ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনা একজন বিপ্লবী নেতার কন্যা। ১৯৭০-এর দশকে তার বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডই তার রাজনৈতিক উত্থানের সূচনা করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষে ওঠার পর ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে তার নাটকীয় পতন ঘটে এবং তিনি ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেন। এখন তার অনুপস্থিতিতেই দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে—যদি ভারত তাকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। আন্দোলনের সহিংসতায় জাতিসংঘের হিসেবে ১৪০০ মানুষ নিহত হয়। এরপর গত বছরের আগস্টে ১৫ বছরের শাসন শেষে তিনি ভারতে পালিয়ে যান।
বাংলাদেশি বিশ্লেষক মুবাশ্বর হাসান বলেন, দেশ ছাড়াই তার অপরাধের স্বীকারোক্তি। ভারত—যা একসময় তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল—এখন এই রায় কার্যকরের প্রধান সিদ্ধান্তগ্রহণকারী।
১৯৭৫ সালে পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসনে কাটানো ছয় বছর ভারতের প্রতি তার আস্থা গড়ে দেয়। দেশে ফিরে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে শক্ত হাতে দেশ পরিচালনা করেন। দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগও বাড়তে থাকে।
কিন্তু ২০২৪ সালের শিক্ষার্থী আন্দোলন তার সরকারকে পতনের মুখে ঠেলে দেয়। বিক্ষোভ দমনে উসকানি, হত্যার নির্দেশ, ড্রোন-অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি—এমন অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায় ঘোষণার সময় আদালতে নিহতদের পরিবার কান্না ও করতালিতে ভেঙে পড়ে। এক নিহত বিক্ষোভকারীর বাবা বলেন, পুরো শান্তি পাব যখন তাকে ফাঁসির দড়িতে দেখব।
ভারত রায়কে স্বীকৃতি দিলেও নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ভারত সবসময় ভালো বন্ধু। তারা আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে।
তবে ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়েত মনে করেন, ভারত তাকে ফেরত পাঠাবে না। ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী রাজনৈতিক অপরাধে কাউকে ফেরত না পাঠানোর বিধান ভারত ব্যবহার করতে পারে। তার মতে, হাসিনা এখনো সুপ্রিম কোর্ট বা হেগে আপিল করতে পারেন, তাই ভারত তাড়াহুড়ো করবে না।
এদিকে রায়ের পরদিন বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনাকে দ্রুত ফেরত দিতে ভারতের কাছে আবারও চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া ভারতের দায়িত্ব।
আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দেশের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব অনিশ্চিত, অন্যদিকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গভীর রাজনৈতিক বিভাজন কমানোর চ্যালেঞ্জে রয়েছে। সুযোগ নিতে পারে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলও।
অনলাইন ডেস্ক/আর কে-০২







