সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে এতিমখানার বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে যাচাই–বাছাই করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ তদন্ত টিম বুধবার (১৯ নভেম্বর) সাতক্ষীরায় পৌঁছাবে। অভিযোগ উত্থাপনের পর থেকেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন রোকনুজ্জামান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের শাল্যে গ্রামের আবু জাফর সিদ্দিকীয়া এতিমখানা (রেজি–২৮০/৯৯) ২০০৮ সালে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও ২০১১ সালে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হিসেবে যোগদানের পর রোকনুজ্জামান স্থানীয় শাল্যে আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী কবির হোসেনসহ কয়েকজনকে নিয়ে ভুয়া রেজুলেশনের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন—এমন অভিযোগ ওঠেছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ক্যাপিটেশন গ্রান্ট রেজিস্ট্রারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের আগের বরাদ্দের কোনো রেকর্ড নেই। অভিযোগ রয়েছে—রোকনুজ্জামান নিজেই এসব নথি গায়েব করে দেন। তবে ২০১৭–১৮ ও ২০১৮–১৯ অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ভুয়া বিল–ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীরা জানান, ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অস্তিত্বহীন এতিমখানার নামে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ভারত থেকে অবৈধ পথে আনা গরুর বিপরীতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে প্রদেয় টাকার নামে রোকনুজ্জামান নিয়মিত বড় অঙ্কের টাকা আদায় করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেই টাকার একটি অংশ নাকি পাঠানো হতো তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের এপিএস এবং রোকনুজ্জামানের মামা তৌহিদুজ্জামানের কাছে, যার ফলে তার অনিয়ম–দুর্নীতি চাপা পড়ে যেত।
অভিযোগ অনুযায়ী, অবৈধ অর্থ দিয়ে রোকনুজ্জামান সাতক্ষীরা শহরের সার্কিট হাউস মোড়সংলগ্ন প্রধান সড়কে ৮ কাঠা জমির ওপর সাততলা ভবন নির্মাণ করেছেন। ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকির উদ্দেশ্যে ভবনটির মালিকানা দুই ভাইয়ের নামে দেখানো হয়েছে বলে জানা যায়। সম্প্রতি একই এলাকায় প্রায় এক কোটি টাকায় আরও পাঁচ শতক জমি কেনার তথ্যও পাওয়া গেছে। রেজিস্ট্রি অফিসের বিভিন্ন বছরের রেকর্ডে তার নামে ও স্বজনদের নামে অসংখ্য সম্পত্তি ক্রয়ের তথ্য মিলেছে।
সরকারি চাকরিতে একই জেলায় তিন বছরের বেশি না থাকার নিয়ম থাকলেও রোকনুজ্জামান প্রায় ১৮ বছর ধরে সাতক্ষীরাতেই বহাল রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি বারবার বদলি এড়িয়েছেন। সম্প্রতি আবার তার ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তাকে আশাশুনি থেকে বদলি করে জেলার উপপরিচালকের দায়িত্ব দেওয়ার ঘটনাকেও অনেকেই তদন্তের চাপ কমানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে রোকনুজ্জামানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সায়েদুর রহমান মৃধা বলেন, “অভিযোগ অনুযায়ী যথানিয়মে তদন্ত সম্পন্ন হবে।”







