সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: একসময় সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে খেলাধুলা ছিল মেয়েদের জন্য এক অঘোষিত নিষিদ্ধ এলাকা। ঘূর্ণিঝড়, দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক বাধা তাদের জীবনের পরিসর সীমিত করে রেখেছিল ঘরের চার দেয়ালে। কিন্তু সময় বদলাচ্ছে—এখন মেয়েরাও ফিরছে মাঠে, গড়ে তুলছে আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্বের শক্তি।
এই পরিবর্তনের বাস্তব চিত্র দেখা গেছে শোভনালী ইউনিয়নের গোদাড়া ফুটবল মাঠে আয়োজিত ‘উপকূলীয় ক্রীড়া উৎসব’-এ। বুধবার (১২ নভেম্বর) দিনব্যাপী এই উৎসব আয়োজন করে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, টেরে দে জোম ফাউন্ডেশন, এসডিসি ও অলিম্পিক রিফিউজ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে। অনুষ্ঠানটি ছিল ‘এসপি’রিট (Sports for Protection, Resilience and Transformation) প্রকল্পের অংশ, যার লক্ষ্য কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন।
গত চার মাসে সাতক্ষীরার পাঁচ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ২৭০০ কিশোর-কিশোরী—সমান সংখ্যক ছেলে ও মেয়ে—১৮০টি দলে অংশ নেয় ১৮টি সেশনে। ফুটবল ও ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার মাধ্যমে তারা শেখে ছয়টি জীবনদক্ষতা—বিশ্বাস, সহযোগিতা, যোগাযোগ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সৃজনশীল চিন্তা ও দায়িত্বশীলতা।
ক্রীড়া উৎসবে ছিল হাঁড়িভাঙা প্রতিযোগিতা, স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খেলা এবং ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত ফুটবল ম্যাচ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আশাশুনি উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, “শোভনালী ইউনিয়ন জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্র্যের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলেও এই প্রকল্প শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ ও আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে মাঠ ও স্পোর্টস ক্লাব উন্নয়নে আমরা কাজ চালিয়ে যাব।”
মূল বক্তা জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসান শামসুজ্জামান বলেন, “যে মাঠে খেলা শেখে, সে জীবনে কখনো হার মানে না। এসপি’রিট প্রকল্প ছেলেমেয়ে উভয়ের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলছে। ভবিষ্যতে কোনো শিশু যদি ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে, আমরা তার পাশে থাকব।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শোভনালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা।
উৎসবের সমাপ্তিতে কিশোর-কিশোরীরা নেতৃত্ব দিয়ে প্রদর্শনী স্টল সাজায়, যেখানে তারা নিজেদের কমিউনিটি ম্যাপিং, সমস্যা নিরূপণ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে।







