উন্নত জীবনের আশায় মরক্কোর এক নারী তার ১০ বছর বয়সি সন্তানকে নিয়ে সাঁতার কেটে স্পেনে পৌঁছেছেন। এই ঘটনা মরক্কো ও স্পেনে দু’দেশই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
রোববার (১২ অক্টোবর) মরক্কোর ফনিদেক শহর থেকে সাঁতার কেটে স্পেনের সেউটায় পৌঁছান ওই নারী ও তার সন্তান।
স্থানীয় স্প্যানিশ গণমাধ্যম এল ফারো দে সেউটা জানিয়েছে, এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়- উত্তাল সমুদ্রে এক শিশু শক্ত করে একটি ভাসমান বোর্ড ধরে আছে, তার পাশে তার মা। দুজনেই ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত, কয়েক ঘণ্টা ধরে ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে তারা তীরে পৌঁছান। তাদের শরীরে ছিল কেবল ডাইভিং স্যুট ও পায়ের ফিন।
তীরে উপস্থিত লোকজন বিস্ময়ের সঙ্গে এই দৃশ্য দেখেন। এক পর্যায়ে মা ও সন্তান সেউটার সৈকতে পৌঁছালে স্পেনের সিভিল গার্ড সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে। বালুচরে ওঠার পর তাদের চেহারায় ভয় ও ক্লান্তির ছাপ ছিল। যা বুঝিয়ে দেয় কেমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তারা সাগর পাড়ি দিয়েছেন। উদ্ধারের পর মা ও সন্তানকে চিকিৎসা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাদের সেউটার শরণার্থী গ্রহণকেন্দ্রে পাঠানো হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মরক্কো ও সেউটার সীমান্তে বেড়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্ত করা হয়েছে। এতে অনেকেই সাঁতার কেটে সেউটায় প্রবেশের চেষ্টা করছেন। যদিও মরক্কো ও স্পেনের এই ছিটমহলের দূরত্ব কম, কিন্তু পথটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। তীব্র স্রোত ও পাথুরে সৈকত সাঁতারুদের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।
গত বছর ১৯ বছর বয়সি মরক্কোর তরুণী ছাইমা এল গ্রিনি সাঁতার কেটে সেউটায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে জানান, ‘এই পথটা খুব কঠিন। ভালো সাঁতারু না হলে পার হওয়া সম্ভব নয়। আমি ভয়ংকর কষ্ট পেয়েছি, কারণ সমুদ্রের স্রোত আপনাকে টেনে নিয়ে যায় পাথরের দিকে। যারা চেষ্টা করেননি, তারা বুঝবেন না এই অভিজ্ঞতা কতটা কঠিন।’
চলতি বছর এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন মরক্কোর নাগরিক সাঁতার কেটে সেউটায় প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
এই ধরনের ঘটনাগুলো মরক্কোর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের দৃশ্য ফুটে উঠেছে। দেশটিতে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় এবং তরুণদের চাকরির সুযোগ সীমিত থাকায় অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে মরক্কো জুড়ে শুরু হয়েছে বড় আকারের বিক্ষোভ। মরক্কোয় বর্তমানে বেকারত্বের হার ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে ৩৬ শতাংশই বেকার।
‘জেন জি ২১২’ নামের একটি সংগঠনের আহ্বানে শত শত তরুণ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের দাবি জানিয়ে রাস্তায় মরক্কোর রাস্তায় নেমেছেন। এই প্রেক্ষাপটে অনেকেই ভবিষ্যতের আশায় দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, বিশেষ করে ইউরোপমুখী হচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। পুরুষদের পাশাপাশি এখন ক্রমেই বেশি সংখ্যক নারী এই বিপজ্জনক সাঁতারের পথ বেছে নিচ্ছেন।
দেশটির গবেষক আলি জুবাইদি বলেন, ‘এই নারীরা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে নাড়িয়ে দিচ্ছেন। কারণ সেউটায় সাঁতার কেটে পৌঁছানোর জন্য যে ধৈর্য ও শক্তি প্রয়োজন, তা সাধারণত পুরুষদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা হয় মরক্কোর সমাজে। কিন্তু নারীরা একা এই বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে প্রমাণ করছেন, তারাও সক্ষম। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজের হাতে নেওয়া একজন নারীর এই সাহস সমাজে আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।’
অনলাইন ডেস্ক/আর কে-০৫







