মোঃ মাসুদুর রহমান শেখ, বেনাপোল: যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারণ সরকারি খাদ্য গুদামে নিম্নমানের চাল মজুদ ও বিপুল পরিমাণ চাল ঘাটতির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে দুদকের যশোর অফিসের একটি দল গুদামটিতে অভিযান চালিয়ে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।
অভিযান শেষে দুদকের দল গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) জামশেদ ইকবালুর রহমান এবং উপ-খাদ্য পরিদর্শক ফারজানাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ যশোর দুদক অফিসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
দুদকের যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল-আমিন বলেন, “ঢাকা থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনায় আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযোগ ছিল—গুদামে নিম্নমানের চাল মজুদ রাখা হয়েছে এবং খামালে চাল কম দেখিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা গুদামের বিভিন্ন খামার পরিদর্শন করেছি, বিশেষ করে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর খামারে নিম্নমানের চাল পাওয়া গেছে।”
তিনি আরও জানান, ২০২৫ সালের বোরো মৌসুমে এখানে ১২ হাজার ৬১৬ মেট্রিক টন চাল এবং ১ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের কথা ছিল। দুদক কর্মকর্তারা সরবরাহকারীদের তালিকা চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা দিতে ব্যর্থ হন। “বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হবে,” বলেন আল-আমিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গুদামের প্রতিটি খামালে ১ থেকে ৩ টন করে চাল কম পাওয়া গেছে। ফলে মোট প্রায় ৩৫ মেট্রিক টন চাল ঘাটতি ধরা পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওসিএলএসডি জামশেদ ইকবালুর রহমান বিধিবহির্ভূতভাবে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে কম দামে চাল ক্রয় করে গুদামে জমা দিয়েছেন।
৪, ৫ ও ৬ নম্বর গুদামে নিম্নমানের ও খাওয়ার অনুপযোগী চাল মজুদ রয়েছে। কিছু চাল পুরনো ও লালচে রঙের, যা দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া গুদামে ১,৫০০ খালি বস্তার ঘাটতি পাওয়া গেছে।
সূত্র আরও জানায়, ২০২৪ সালের মার্চে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম সম্বলিত বস্তায় নিম্নমানের চাল বিতরণের ঘটনায় এলাকায় বিক্ষোভ দেখা দেয়। সে সময় জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলেও, আরসি ফুড ইকবাল বাহার চৌধুরীর তদবিরে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
একই বছরের সেপ্টেম্বরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোঃ আবুল আমিন গুদামটি পরিদর্শন করে খাতা-কলমে মজুদের সঙ্গে বাস্তব মজুদের অসঙ্গতি খুঁজে পান। তদন্তে দেখা যায়, চারটি খামালের কোনো অস্তিত্বই নেই। সে সময় প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন চাল ঘাটতি ধরা পড়ে, যা পরে স্থানীয় ডিসি ফুডকে ‘ম্যানেজ’ করে বাজার থেকে চাল এনে পূরণ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া সদ্য সমাপ্ত বোরো মৌসুমে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান না নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। কৃষকের নাম ব্যবহার করে তৈরি করা তালিকায় বহু জাল স্বাক্ষর ও ভুয়া মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে।
সূত্র আরও জানায়, সাম্প্রতিক অভিযানে নিম্নমানের চালের সত্যতা ধরা পড়ায় ওসিএলএসডি জামশেদ ইকবালুর রহমান এখন উচ্চপর্যায়ে তদবির চালাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ খাদ্য গুদামে বদলির চেষ্টা করছেন বলেও জানা গেছে।
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “প্রাথমিক অনুসন্ধানে কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”







