মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে ঘেরের ভেড়িবাঁধে লাউ চাষ করে কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি। আগে এসব এলাকায় পতিত জমি ফাঁকা থাকলেও এখন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সহায়তায় কৃষকরা ওই জমিতে সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
এক সময় বাড়ির আঙিনায় পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে লাউ চাষ করা হলেও এখন সেটি বাণিজ্যিক আকার নিয়েছে। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের কৃষকরা এখন মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষে ঝুঁকছেন। এতে সময় ও খরচ দুটোই কম, আবার ফলনও ভালো হওয়ায় কৃষকরা এখন এ ফসলে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
বাগেরহাট কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ঘেরের ভেড়িবাঁধে প্রায় ৫৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে, যার একটি বড় অংশ লাউ চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে।
লাউ চাষে সফলতার গল্প
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লাউয়ের খেতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তাঁরা গাছের যত্ন নেওয়া ও কীটনাশক স্প্রে করতে ব্যস্ত। উপজেলার চিংড়াখালী ইউনিয়নের কৃষক আবুবকর বলেন, “আমরা একটু বাড়তি আয়ের আশায় মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ শুরু করেছি। নিয়মিত পরিচর্যা করার কারণে প্রতিটি গাছে প্রচুর ফল এসেছে। রোগবালাই কম এবং ফলনও ভালো।”
মোরেলগঞ্জের উমাজুরি গ্রামের সফল কৃষক শাহজালাল বাবু জানান, “লাউ চাষে লাভ বেশি, খরচ কম। জৈব সার ব্যবহার করায় ফলনও ভালো হয়। আমি ১০ বিঘা জমিতে লাউ ও বিভিন্ন সবজি চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ৪০০ থেকে ৫০০টি চারা রোপণ করা যায়।”
কৃষি দপ্তরের ভূমিকা
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “মোরেলগঞ্জের মাটি লাউ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ উপজেলায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ করা হয়েছে এবং এটি চলমান রয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার জানান, “বাগেরহাট জেলায় সবজি উৎপাদনে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। সরকার সময়মতো সার, বীজ ও ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। ফলে এবছর সবজির মধ্যে লাউ ও শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। আমরা কৃষকদের কারিগরি সহায়তা ও বাজারজাতকরণের দিকেও নজর দিচ্ছি।”
কৃষকের আশা ও ভবিষ্যৎ
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, বাজারে লাউয়ের দাম ভালো থাকায় তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে সরাসরি খেত থেকে লাউ কিনে নিচ্ছেন। ফলে কৃষকের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন তারা।
উপজেলা বিএনপি সভাপতি শহিদুল হক বাবুল বলেন, “কৃষি বিভাগ সময়মতো সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সিড কোম্পানিও মাঝে মাঝে গরিব কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।”
লাউ চাষের মাধ্যমে কৃষকরা শুধু নিজেদের জীবনে পরিবর্তন আনছেন না, একই সঙ্গে পতিত লবণাক্ত জমিকে সবুজ ফসলে ভরিয়ে তুলছেন। এই সফলতা উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে।







