নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলের রূপগঞ্জ মুরগি বাজার বাটুল মজুমদারের সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুদ্র প্রান্তিক মুরগি ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, এক সময় ফুটপাতে মুরগি বিক্রি করা বাটুল মজুমদার এখন বাজারের ১১টি দোকানের মধ্যে ৯টিই দখল করে নিয়েছেন। বাজারে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ওজনে কম, দামে বেশি এবং জোর করে দোকান দখলের মাধ্যমে সাধারণ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রেখেছেন তিনি।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বিপুল, রাকীব, ইয়াসিন, মশিয়ার ও হানিফ মোল্লা জানান, প্রায় ২০ বছর আগে রূপগঞ্জ মুরগি বাজারে জেলা প্রশাসন মৌখিকভাবে তাদের ৬ ফুট করে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিল। সেই সময় বাটুল মজুমদারও একটি দোকান পান। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাব ও বাহুবলে বাজারের বাকি দোকানগুলো দখল করে নেন তিনি। বাটুলের সিন্ডিকেটের কারণে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের বাধ্য করা হয় তার কাছ থেকে পাইকারি মুরগি কিনতে — যা প্রায়ই ওজনে কম ও মানে নিম্নমানের হয়।
গত শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বাটুল মজুমদার বহিরাগত লোকজন নিয়ে বাজারে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের মারধর করছেন। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
মুরগি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর জানান, তাকে বাজার থেকে উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, “যেকোনো সময় আমাকে উচ্ছেদ করতে পারে, তাই আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, বাটুল মজুমদার তার প্রভাব খাটিয়ে রূপগঞ্জ থেকে টার্মিনাল কাঁচাবাজার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার কারণে মুরগির দাম সবসময়ই ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি থাকে। দেনার অজুহাতে বহু পুরনো ব্যবসায়ীকে দেউলিয়া করে দোকান দখল করেছেন তিনি। ফলে এখন বাজারের প্রায় সব দোকানই তার নিয়ন্ত্রণে।
তারা বলেন, “আমরা এই জিম্মিদশা থেকে মুক্তি চাই। বাটুল মজুমদারের সিন্ডিকেট ভেঙে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে চাই।”
অভিযোগ রয়েছে, ওজনে কম ও উচ্চমূল্যে অসুস্থ মুরগি বিক্রি করে বাটুল মজুমদার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে তিনি নামে-বেনামে জমি ও বাড়ি কিনেছেন।
এ বিষয়ে বাটুল মজুমদার বলেন, “আমি কাউকে জোর করে উচ্ছেদ করিনি। তারা স্বেচ্ছায় দোকান বিক্রি করেছে, আমি কিনেছি।”
রূপগঞ্জ কাঁচাবাজার সমিতির সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, “আজ আমি বাজারে ছিলাম না। তবে আমরা একাধিকবার মুরগি ব্যবসায়ীদের নিয়ে সালিশ করেছি। তাদের বলেছি ওজনে সঠিকভাবে দিতে ও রোগা বা মরা মুরগি বিক্রি না করতে।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, “আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করি। কোনো ব্যবসায়ী যদি ওজনে কম দেয় বা বেশি দামে বিক্রি করে, তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”







