সাইপ্রাসে নির্মাণ কাজের সময় ছাদ থেকে পড়ে হাফিজুর রহমান (৪৫) নামে যশোরের এক প্রবাসীর করুণ মৃত্যু হয়েছে। তিনি বেনাপোল সীমান্তের পুটখালী গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।
মাত্র ১৩ দিন আগে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে সংসার-পরিজন ছেড়ে ইউরোপের এই দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্নের পরিসমাপ্তি ঘটলো এক নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
হাসপাতালের বিছানায় ৬ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মঙ্গলবার রাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হাফিজুর। একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে রেখে যাওয়া দেনার বোঝা—সব মিলিয়ে ভেঙে পড়েছে পরিবারটি।
পুটখালী সীমান্তের চিত্রটাই বলে দেয় হাফিজুরদের কষ্টের গল্প। এক সময় ভারতীয় গরুর ব্যবসায় জীবিকা চললেও সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৫ বছর। সংসারের অভাব কাটাতে এখন অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন—হাফিজুরও ছিলেন তাদের একজন।
পরিবারের স্বজনেরা জানান, এক বন্ধুর মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে সাইপ্রাসে যান হাফিজুর; এর মধ্যে ৭ লাখ টাকা তিনি মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, কাজের প্রথম দিনেই অসাবধানতার কারণে ৭ তলা ভবনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে যান তিনি। সহকর্মীরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তানজিলা খাতুন বলেন, “সংসারের অভাব ঘোচাতে বিদেশে গিয়েছিলেন হাফিজুর। কিন্তু তাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল পরিবার। দ্রুত মরদেহ যেন দেশে ফেরত আসে, সে বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা চাই।”
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান জানান, নিহতের পরিবারকে সরকারি আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলে মরদেহ দ্রুত দেশে ফেরাতে সহযোগিতা করবে উপজেলা প্রশাসন।
বিদেশে গিয়ে প্রবাসী হওয়া হাফিজুরের স্বপ্ন এখন মরদেহ হয়ে ফিরে আসছে। আর তার পিছনে পড়ে রইল শোকে পাথর হয়ে যাওয়া পরিবার, অনিশ্চয়তার বোঝা আর চোখের জলে ভেজা পুটখালী গ্রামের আকাশ।