Sunday, September 28, 2025

যেমন ছিল মহানবী (সা.)–এর জুমার খুতবা

ওয়েব ডিজাইন — ওয়ান-টাইম স্টার্টার

৫,০০০.০০৳ ২,৫০০.০০৳

১–৩ পেজ • রেসপনসিভ • Elementor Pro • কন্ট্যাক্ট ফর্ম • বেসিক অন-পেজ SEO • ২ রাউন্ড রিভিশন • ১০GB হোস্টিং • ফ্রি ডোমেইন (প্রথম বছর)

এখনই অর্ডার করুন
NS IT Web Solutions

কল্পনা করুন, জুমার দিন, মদিনার মসজিদে নববিতে বসে আছি। হৃদয়ে এক অদ্ভুত উত্তেজনা, প্রতীক্ষার এক মধুর অনুভূতি। নবীজি মুহাম্মদ (সা.) এখনই মিম্বরে উঠবেন, খুতবা দেবেন। তাঁর কথা শোনার জন্য হৃদয় যেন অধীর হয়ে আছে। তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে, তাঁর কণ্ঠে আল্লাহর বাণী শুনব—এই মুহূর্তটি যেন জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়।

ইসলামে জুমার দিন একটি উৎসবের মতো, যেমন নবীজি (সা.) বলেছেন: ‘এই দিনটি আল্লাহ মুসলিমদের জন্য একটি উৎসব হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। যে জুমার নামাজে আসে, সে যেন গোসল করে, সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে এবং মিসওয়াক করে।’ (সুনানে ইবন মাজাহ, হাদিস: ১,০৯৮)

এই কথাগুলো আমাকে মনে করিয়ে দেয় জুমার দিনটি কতটা বিশেষ।

নবীজি (সা.)–এর জুমার প্রস্তুতি
নবীজি (সা.) নিজেই এই শিক্ষার জীবন্ত উদাহরণ ছিলেন। জুমার নামাজের আগে তিনি গোসল করতেন, যাতে তাঁর শরীর পবিত্র ও সতেজ থাকে। তিনি সেরা সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, শরীরের প্রতিটি অংশে তা ছড়িয়ে দিতেন।

যদি কারও সামর্থ্য থাকে, তবে জুমার জন্য তার কাজের পোশাক ছাড়া আলাদা পোশাক কিনুক।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৭৮

মিসওয়াক দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতেন, আর সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরতেন। তাঁর এই প্রস্তুতি যেন আমাদের শেখায়, জুমা কেবল একটি নামাজ নয়, এটি একটি উৎসব, যেখানে আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হই।

একবার হজরত উমর (রা.) বাজারে একটি সুন্দর রেশমি পোশাক দেখে তা নবীজি (সা.)–এর জন্য কিনে আনেন, যাতে তিনি তা জুমার খুতবায় বা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতে পরেন। কিন্তু নবীজি সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ রেশম মুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ।

তিনি বললেন, ‘যদি কারও সামর্থ্য থাকে, তবে জুমার জন্য তার কাজের পোশাক ছাড়া আলাদা পোশাক কিনুক।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৭৮)

এই ঘটনা আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে। নবীজি (সা.)-এর সরলতা, তাঁর নীতির প্রতি অটলতা আমাদের শেখায়, জুমার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে হৃদয়ের পবিত্রতা ও নিষ্ঠা দিয়ে।
মসজিদে নবীজির উপস্থিতি
মসজিদে প্রবেশ করে নবী (সা.) মিম্বরে উঠতেন, সবাইকে সালাম দিতেন। তাঁর হাতে একটি লাঠি থাকত, যা তিনি ধরে বসতেন। তারপর হজরত বিলাল (রা.) আজান দিতেন। সেই সময়ের মানুষ দেয়ালের কাছে বসার চেষ্টা করতেন না, যেমনটা আজকাল অনেকে করে।

তাঁরা নবীজি (সা.)–এর শিক্ষা মেনে ইমামের কাছাকাছি বসতেন। তিনি বলেছিলেন, ‘খুতবায় উপস্থিত হও এবং ইমামের কাছে বসো। যে দূরে থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করলেও পিছিয়ে থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)

এই কথা নবীজি (সা.)-এর কাছাকাছি থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগায় সাহাবিদের হৃদয়ে।

যখন তিনি বিশ্বাসীদের একটি ভবনের মতো শক্তিশালী বলে বর্ণনা করতেন, তখন তাঁর হাত দুটি শক্ত করে ধরতেন। যখন জিভের বিপদের কথা বলতেন, তখন নিজের মুখের দিকে ইশারা করতেন।
নবীজির খুতবা ছিল এমন এক মুহূর্ত, যেখানে হৃদয় আর মন এক হয়ে যেত। তিনি সবাইকে লক্ষ করতেন, প্রতিটি বিষয়ে নজর রাখতেন। একবার আবু কায়স (রা.) মসজিদে এসে দেখলেন নবীজি (সা.) খুতবা দিচ্ছেন। তিনি রোদে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন। নবীজি তাঁকে ছায়ায় বসতে ইশারা করলেন।

আরেকবার সুলাইক আল-গাতাফানি (রা.) মসজিদে এসে দুই রাকাত নামাজ না পড়ে বসে পড়লেন। নবীজি খুতবা থামিয়ে তাঁকে দুই রাকাত নামাজ পড়তে বললেন। কেউ কেউ বলেন, সুলাইকের দরিদ্র অবস্থা সবাইকে দেখানোর জন্যই নবীজি (সা.) এটা করেছিলেন, যাতে নামাজের পর মানুষ তাঁকে সাহায্য করে।

নবীজির সহানুভূতি, তাঁর দৃষ্টি যেন প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে পৌঁছাত। (আল-আযিমাবাদি, মুহাম্মদ শামসুল হক, আউন আল-মাবুদ, ৩/১২৫, দার আল-কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১৯৯৮)

নবীজির খুতবা
নবীজি (সা.)–এর খুতবা ছিল যেন একটি সমুদ্র—গভীর, বিস্তৃত, মনোমুগ্ধকর। তিনি হাতের ইশারা, চোখের ভাষা আর কণ্ঠের সুরে কথা বলতেন।

যখন তিনি বিশ্বাসীদের একটি ভবনের মতো শক্তিশালী বলে বর্ণনা করতেন, তখন তাঁর হাত দুটি শক্ত করে ধরতেন। যখন জিভের বিপদের কথা বলতেন, তখন নিজের মুখের দিকে ইশারা করতেন। জান্নাতের দরজা খোলার কথা বলতে গিয়ে তিনি হাত দিয়ে দরজা খোলার ভঙ্গি করতেন।

তাঁর কথাগুলো এত স্পষ্ট ছিল যে তিনবার পুনরাবৃত্তি করে তিনি নিশ্চিত করতেন সবাই তা বুঝেছে। তাঁর চোখ আর কণ্ঠে আবেগ ফুটে উঠত—আনন্দের কথায় তাঁর মুখ উজ্জ্বল হতো, দুঃখের কথায় চোখে বিষাদ নামত।
উম্মে হিশাম, হারিস ইবনে নুমানের মেয়ে, বলেছিলেন, ‘আমি নবীজির জুমার খুতবা শুনে সুরা কাফ মুখস্থ করেছি।’

তিনি প্রতি জুমায় এই সুরা তিলাওয়াত করতেন, কারণ এটি জীবন ও মৃত্যুর গভীর আলোচনা করে। খুতবায় তাঁর উপস্থাপিত দৃষ্টান্ত আর উপমা ছিল এত জীবন্ত যে সাহাবিরা তাঁর কথা হৃদয় দিয়ে শুনতেন। তাঁদের শরীর এত নিশ্চল থাকত যেন মাথায় পাখি বসে আছে।

এসব বর্ণনা আমার হৃদয়ে একটি ছবি আঁকে—নবীজির সামনে বসে আছি, তাঁর কথায় হৃদয় ভরে যাচ্ছে, মন শান্ত হচ্ছে।

হৃদয়ের সাক্ষাৎ
একবার নবীজি (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন, তাঁর নাতি হাসান ও হোসাইন (রা.) লাল পোশাকে তাঁর দিকে দৌড়ে এলেন। তাঁরা ছোট্ট শিশু ছিলেন, পোশাকের কারণে বারবার হোঁচট খাচ্ছিলেন। নবীজি খুতবা থামিয়ে মিম্বর থেকে নেমে তাঁদের কোলে তুলে নিলেন। তিনি আয়াত পড়লেন: ‘তোমাদের সম্পদ ও সন্তান কেবল একটি পরীক্ষা।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত: ১৫)

তারপর তাঁদের জন্য দোয়া করে কোলে নিয়ে মিম্বরে ফিরলেন।
আরেকবার, আসমা বিনত আবু বকর (রা.) বলেন, এক জুমায় পুরুষ সাহাবিরা এত কাঁদছিলেন যে নারীরা নবীজির খুতবা শুনতে পাননি। পরে তাঁরা জানতে পারেন, নবীজি (সা.) কবরের পরীক্ষা ও কষ্ট নিয়ে কথা বলছিলেন।

নবীজির কথা এত শক্তিশালী ছিল যে তা হৃদয়কে কাঁদিয়ে দিত, মনকে জাগিয়ে তুলত।

জুমার নামাজে নবীজির সুন্দর পোশাক, সুগন্ধি, মিসওয়াকের ব্যবহার, তাঁর কণ্ঠের সুর—সবকিছু যেন আমাকে ডাকে। তাঁর কথায় জীবন ও মৃত্যুর পাঠ, তাঁর দৃষ্টিতে করুণা, তাঁর ইশারায় জ্ঞান—এগুলো আমার হৃদয়কে পূর্ণ করে।

নবীজি (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, জুমা একটি উৎসব, একটি দিন, যখন আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের সেরাটা নিয়ে হাজির হই। তাঁর খুতবা ছিল হৃদয় জাগানোর শিল্প, যা আমাদের আল্লাহর পথে নিয়ে যায়।

আসুন, আমরা জুমার এই আলোকে হৃদয়ে ধরে রাখি, নবীজির শিক্ষায় জীবনকে আলোকিত করি। আসসালামু আলাইকুম—শান্তি বর্ষিত হোক।

ওমর সুলাইমান রচিত মিটিং মুহাম্মাদ বই থেকে অনুবাদ: মনযূরুল হক

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর