যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করার লক্ষ্যে রিসার্চ ফেলোশিপ চালু করা হয়েছে। এর আওতায় শিক্ষার্থীরা ১২ মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ২ হাজার ৫শ টাকা করে ত্রিশ হাজার টাকা ফেলোশিপ হিসেবে বৃত্তি পাবেন। এছাড়া, যে সকল শিক্ষার্থী ২ বছরের মাস্টার্স কোর্সে (রিসার্চ মাস্টার্স) অংশগ্রহণ করবেন তারা ১৮ মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে মোট ৫৪ হাজার টাকা ফেলোশিপ হিসেবে পাবেন।তবে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে মাস্টার্সে ফেলোশিপ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরকে কমপক্ষে একটি প্রকাশনা প্রকাশের শর্ত হয়েছে।
২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর আব্দুল মজিদ নানা সাফল্য তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।মতবিনিময় সভায় জানানো হয়
যবিপ্রবি গবেষণায় আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। যবিপ্রবির শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ইমপ্রুভিং কম্পিউটার অ্যান্ড সফট ইঞ্জিনিয়ারিং টারসিয়ারি এডুকেশন প্রজেক্ট (আইসিএসইটিইপি) এর আওতায় প্রায় ৩০৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রদান করা হয়েছে। এই কাজ চলমান। এই প্রকল্পের আওতায় সিএসই বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য সেমিনার, কনফারেন্সসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সিএসই বিভাগের জন্য নতুন একাডেমিক ভবন, ইনকিল সেন্টারসহ উন্নতমানের ল্যাব নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্প সফল হলে যবিপ্রবি তথ্য ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাবে।তিনি আরো উল্লেখ করেন বাংলাদেশের ৫৫ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এই প্রকল্পটি পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যবিপ্রবিতে সেন্টার ফর ট্রেইনিং অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট (সিটিএসডি) যাত্রা শুরু করেছে। এই সেন্টার শিক্ষার্থীদের সফট্ স্কিল এবং ভাষা শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
শুরুতে এই সেন্টারে ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি অন্য ভাষা এবং সফট্ স্কিল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ থাকছে। এই সেন্টার প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের কর্ম-উপযোগী করে তোলা এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের প্রতিযোগিতায় দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। এই সেন্টারে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার কোর্স যেমন- ইংরেজি, জাপানি, চায়নিজ, জার্মান, অ্যারাবিক, কোরিয়ান, ফ্রেন্স ও স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষার সুযোগ থাকবে। এছাড়াও সফট্ স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজন করা হবে, যা শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ দক্ষতা, সমস্যা সমাধান এবং নেতৃত্ব দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা বিকাশে ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করা হয়।
যশোরের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা যেন এই সুবিধা পেতে পারে সে লক্ষ্যে যশোর শহরে এই সেন্টারের একটি শাখা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এই কার্যক্রম দেশের বেকারত্ব হ্রাসকরণে ও কর্মসংস্থানের অভাব দূরীকরণে যবিপ্রবি ইনোভেশন অ্যান্ড স্টার্ট-আপ সাপোর্ট সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্যোক্তা হলে সব ধরনের সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যদি কোনো শিক্ষার্থী আইডিয়া ইনোভেশন করে সফল হতে পারে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার জন্য দুই বছর বিনা মূল্যে অফিস সার্ভিস দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালগুলোর মধ্যে প্রথম কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যবিপ্রবি এ ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) আইকিউএসি সেলকে সহায়তা করতে গঠন করা হয়েছে অ্যাক্রেডিটেশন সাপোর্ট সেল। এই সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য কাজ করবে। এর মাধ্যমে বিভাগসমূহের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্বীকৃতি সংস্থা যেমন BAC, BAETE, ABET, AUN-QA ইত্যাদির অ্যাক্রেডিটেশন অর্জনেও সহায়তা প্রদান করা হবে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগদানের পর শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবী ছিল যবিপ্রবি’র দুইটি নতুন হল চালু ও লিফট এর সমস্যা সমাধান। আরো বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন দুইটি হল মুন্সি মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ ও বীরপ্রতীক তারামন বিবি হল ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে এবং হলের ভেতরে সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে। একই সাথে সকল হলের ডাইনিং আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। সকল নতুন ভবনের লিফট সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ভবনের নাম ইতোমধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা ও ফুটপাত সংস্কার ও প্রশস্তকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে যা দৃশ্যমান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে যানবাহন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে ও বিভিন্ন রুটে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন পরিবহন সংযোজনের মাধ্যমে সে সকল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া চালু করা হয়েছে। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের কনফারেন্স রুম আধুনিকায়ন করা হয়েছে। একাডেমিক ভবনের ক্যান্টিন পুনঃসংস্কার করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত প্রকাশের জন্য অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রম আধুনিকায়ন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক জরুরী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জরুরী সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। যবিপ্রবির ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরলস প্রচেষ্টায় গত ৮ সেপ্টেম্বর,বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল (বিভিসি) এর আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন লাভ করেছে।
এর ফলে এই অনুষদ থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীরা এখন থেকে পেশাদার ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে দেশে-বিদেশে স্বীকৃতি পাবেন। এই স্বীকৃতি যবিপ্রবির ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদকে দেশের ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণায় আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে এবং প্রাণিসম্পদ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে বলা হয়।