Sunday, September 28, 2025

যশোরের শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক শার্শার খাদিজা খাতুন

ওয়েব ডিজাইন — ওয়ান-টাইম স্টার্টার

৫,০০০.০০৳ ২,৫০০.০০৳

১–৩ পেজ • রেসপনসিভ • Elementor Pro • কন্ট্যাক্ট ফর্ম • বেসিক অন-পেজ SEO • ২ রাউন্ড রিভিশন • ১০GB হোস্টিং • ফ্রি ডোমেইন (প্রথম বছর)

এখনই অর্ডার করুন
NS IT Web Solutions

মো. মাসুদুর রহমান শেখ, বেনাপোল: ভালো শিক্ষক মানেই শুধু পাঠদান নয়—তিনি দিকনির্দেশক, অনুপ্রেরণাদাতা ও সমাজ গড়ার কারিগর। এই কথাটির বাস্তব রূপ দেখা যায় যশোরের শার্শা উপজেলার বাগুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. খাদিজা খাতুনের জীবন ও কর্মে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২৪ উপলক্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে যশোর জেলার ‘শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি খুলনা বিভাগের উপপরিচালক (প্রাথমিক শিক্ষা) প্রেরিত নির্দেশনা অনুযায়ী যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল আলম স্বাক্ষরিত তালিকায় তার নাম প্রকাশ করা হয়।

গত ১০ বছর ধরে খাদিজা খাতুন বাগুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, শিশুদের স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তার নেতৃত্বে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বেড়েছে, শিক্ষার্থীদের ফলাফল উন্নত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠার ৪২ বছর পর প্রথমবারের মতো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি অর্জন করতে শুরু করেছে। সেই যাত্রা শুরু হয় তার নিজের ছেলেমেয়েদের মাধ্যমেই। একই সঙ্গে স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যেও শিক্ষার প্রতি সচেতনতা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢুকলেই চোখে পড়ে পরিপাটি পরিবেশ, খেলাধুলা ও গানে মগ্ন শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি। শিক্ষার্থীদের চোখে ভরসা আর কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস—এই পরিবেশের নেপথ্যে রয়েছেন নিবেদিতপ্রাণ এই প্রধান শিক্ষিকা।

মোছা. খাদিজা খাতুন বলেন, “বিদ্যালয়টি যখন হাতে পাই, তখন যেন ভেঙে পড়া এক ঘর। জরাজীর্ণ অবস্থা ও অবহেলার কারণে এখানকার ছেলেমেয়েরা পাশের বাঁগআঁচড়া স্কুলে যেত। কোনও শিক্ষক বেশিদিন থাকতে চাইতেন না। আমি কায়িক পরিশ্রম করেছি, শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছি। আমার যোগদানের পরই শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। প্রতিষ্ঠার ৪২ বছর পর আমার স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রথম বৃত্তি পায়। শিক্ষা দপ্তর আমার এই প্রচেষ্টা মূল্যায়ন করায় আমি আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ। তবে জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণে সরকারের উদ্যোগই এখন আমার বড় প্রত্যাশা। পরিবেশ ভালো হলে আমি আরও ভালোভাবে সন্তানদের মানুষ গড়তে পারব।”

স্থানীয়রা আরও বলেন, তিনি কেবল একজন প্রধান শিক্ষক নন; ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন মা ও স্বপ্নদ্রষ্টা। জমজ এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী খাদিজা খাতুন নিজের সন্তানদেরও এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন, যেন তারা অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়। তিনি বাগআঁচড়া এলাকার হেলাল মো. আবু রায়হানের স্ত্রী। শিক্ষক পরিবারে বেড়ে ওঠা খাদিজা খাতুনের বাবা ও শ্বশুর—উভয়েই ছিলেন শিক্ষক।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সহকর্মীদের মতে, এ পুরস্কার কেবল একজন শিক্ষকের স্বীকৃতি নয়, বরং পুরো শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য এক অনুপ্রেরণা।

উল্লেখ্য, একইসঙ্গে যশোর সদরের পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুলতানা রাজিয়াকে ‘গুণী সহকারী শিক্ষক’ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও আনন্দমুখর শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন।

শিক্ষাবিদদের ভাষ্য, এই স্বীকৃতি কেবল ব্যক্তিগত সম্মানই নয়, বরং জেলার সকল শিক্ষকের জন্য উজ্জীবনী শক্তি। স্থানীয়দের মতে, শিক্ষক দিবসে এ ধরনের সম্মাননা প্রমাণ করে—অবহেলিত গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলোতেও আছেন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, যারা নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে তুলছেন আগামী দিনের বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর