Saturday, December 6, 2025

যশোর ছেড়ে খুলনা পিবিআই পুলিশ সুপার হলেন সকলের প্রিয় রেশমা শারমিন

যশোর ও নড়াইল জেলায় অপরাধ দমনে অন্যতম ভূমিকা রাখা অতি পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন যশোর ছেড়েছেন। তাকে খুলনার পিবিআই পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ আগস্ট পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের বিশেষ পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে এ বদলি করা হয়। একই সঙ্গে যশোরের নতুন পুলিশ সুপার হিসেবে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত পটুয়াখালীর পিবিআই পুলিশ সুপার কামরুজ্জামানকে যশোরে বদলি করা হয়েছে।

রেশমা শারমিন ২০১০ সালের জুনে প্রথম যশোরে সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হিসেবে যোগ দেন এবং জেলা পুলিশের মুখপাত্র হন। এরপর থেকেই তিনি যশোরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা ভূমিকা পালন করে আসছেন। ২০১৫ সালে গিয়েছিলেন জাতিসংঘের শান্তি মিশনে কঙ্গোতে। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে যশোর ও কুষ্টিয়া বিভাগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিআইডির দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে ২০২০ সালে যশোরের পিবিআই পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পান। যশোরে কর্মরত অবস্থায় তিনি অনেকগুলো সাহসী অভিযান পরিচালনা করেছেন, বহু ক্লুলেস মার্ডারের রহস্য উদঘাটনসহ আসামি শনাক্ত করে আটক করেছেন। বহু অপহৃতকে উদ্ধার করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। তেমনি অপহরণকারী দলকে আটক করে অপরাধ দমনে অবদান রেখেছেন। এর মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে পুরাতন কসবা থেকে ড্রামভর্তি কঙ্কালের রহস্য উদঘাটন। রোববার তিনি যশোরের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন পিবিআই যশোরের ইন্সপেক্টর মীর রেজাউল হোসেনের কাছে এবং যোগ দিয়েছেন খুলনার পিবিআই পুলিশ সুপার হিসেবে।

এ বিষয়ে ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট ২৫তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার হিসেবে যোগদান করা রেশমা শারমিন বলেন, চাকরির চারবছরেরর মাথায় আমি যশোরে যোগদান করি। এরপর থেকে যশোরবাসীর সাথে আমার পথচলা শুরু। দীর্ঘ ১৫ বছরের পথচলায় যশোরবাসীর কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।

তিনি আরও বলেন, কর্মময় জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন ছিল আমার পুরাতন কসবার ড্রামভর্তি কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনা। হত্যার রহস্য উৎঘাটন থেকে শুরু করে আসামি আটক পুরো ঘটনাকে সামনে তুলে আনাটা ছিল অন্যতম চ্যালেঞ্জ। ‍ তিনি সাংবাদিক মহলের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং ব্যস্ততার কারণে যশোর ছাড়ার আগে অনেককে জানাতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন। একই সাথে তিনি সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, রেশমা শারমিন পেশাগত জীবনে নানা সাহসিকতার কারণে পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা)। শিক্ষক পিতার আগ্রহ ও উৎসাহে ছোটকাল থেকেই প্রতিকূলতা জয় করে সামনে এগিয়ে যেতে শিখেছেন।

তিনি ১৯৮০ সালের ৭ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় রাজপুর স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে সোনাবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ১৯৯৫ সালে এসএসসি এবং খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ১৯৯৭ সালে একই বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ২০০৪ সালে বাংলাদেশ হোম ইকোনমিকস কলেজ থেকে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স পাশ করেন।

রেশমা শারমিনের বাবা নজরুল ইসলাম ছিলেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মা মাবিয়া সুলতানা গৃহিণী। তিনি পরিবারের বড় সন্তান; ভাইবোন তিনজন। ২০০৩ সালে অনার্সে পড়ার সময়েই তার বিয়ে হয়। স্বামী রোকনুজ্জামান একজন ব্যাংকার; শ্বশুরবাড়ি বৃহত্তর যশোরের মাগুরা জেলায়। এই দম্পতির একটি ছেলে আছে—তাহমিদ জামান।

বিয়ের পর সংসারের চৌকাঠে আটকে পড়েননি তিনি; বরং স্বামীর প্রেরণায় লেখাপড়া চালিয়ে যান। সংসার ও অ্যাকাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রস্তুতি নিতে থাকেন বিসিএসের। ২০০৬ সালে এমএ পাশ করার সাথে সাথে একই বছর অনুষ্ঠিত ২৫তম বিসিএসে অংশ নিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ পান। হয়ে উঠেন সকলের প্রিয় রেশমা শারমিন।

বিশেষ প্রতিনিধি

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর