🌳 “নড়াইলে বৃক্ষযোদ্ধারা: হাজারো গাছ রোপণে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার নীরব বিপ্লব”

নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইল শহর ও জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন নিঃশ্বার্থ বৃক্ষপ্রেমীর উদ্যোগে হাজার হাজার গাছ রোপণ করা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পাখিদের অভয়াশ্রম তৈরির এই কর্মকাণ্ড স্থানীয়দের মাঝে উৎসাহ জাগাচ্ছে।

নড়াইল শহরের মহিষখোলা এলাকার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব মো. মনির হোসেন—যিনি ‘যাযাবর মনির’ নামে পরিচিত—বলেন, “মা গাছ খুব পছন্দ করতেন। শৈশবে মা চলে গেলেও তাঁর বৃক্ষপ্রেম আমার স্মৃতিতে অম্লান। মায়ের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় ১৯৯১ সাল থেকে গাছ লাগাচ্ছি। এর মধ্যে নড়াইল শহর ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১২ হাজার ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করেছি। বট-পাকড় ৬৫টি আর তালগাছ প্রায় ৩ হাজার। যতদিন বাঁচব, ততদিন গাছ লাগিয়ে যাব।”

মনির হোসেনের মতো আরও অনেকেই এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। পরিবেশকর্মী খন্দকার আল মুনসুর বিল্লাহ, মুন্সী কামরুজ্জমান বুলবুল, শাহ আলম, নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট অলিউল মাসুদ কোটন, অ্যাডভোকেট ইমরান, ইমন, আমিনুল হাসান মিঠুসহ একদল প্রচারবিমুখ মানুষ প্রতিদিন ভোরে তিনটি দলে ভাগ হয়ে শাবল, কাচি, বাঁশের লাঠি ও দড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তারা গাছ লাগানো, আগাছা পরিষ্কার, পানি দেওয়া, গবাদিপশুর হাত থেকে রক্ষার্থে খাঁচা দেওয়া, খুঁটি পাল্টানো এবং মরা গাছের বদলে নতুন গাছ রোপণের কাজ করেন।

তাদের রোপণ করা গাছগুলো নড়াইল সরকারি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, আদালত চত্বর, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ, ফেরিঘাট ও শহরের চার লেন সড়কের দু’পাশে চোখে পড়বে। তাল, বট-পাকড়, কদম, বকুল, অর্জুন, হরিতকি, পলাশ, কদবেল, কাঠবাদাম, কাঁঠাল, জাম, আমলকি, আমড়া—বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগিয়ে তারা শহরকে সবুজে সাজাচ্ছেন।

খন্দকার আল মুনসুর বিল্লাহ ও মুন্সী কামরুজ্জমান বুলবুল বলেন, “ক্লান্ত পথিক দেশি গাছের নিচে আশ্রয় নেবে, পাখিরা বসবে, সাধারণ মানুষ ফল খাবে—এই স্বপ্ন নিয়েই ২৫ বছর ধরে গাছ লাগাচ্ছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার গাছ লাগিয়েছি, এর মধ্যে প্রায় ৪০০ গাছ বেঁচে আছে, ৩০০ গাছে ফল-ফুল ধরেছে।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি শাহ আলম বলেন, “পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যে পরিমাণ বনায়ন দরকার তা নেই। ফলে পাখির খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে এবং অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমরা যখন গাছ লাগাতে যাই তখন এলাকাবাসীও আনন্দিত হয় এবং নিজেরাও গাছ লাগাতে উৎসাহিত হয়।”

নড়াইলের ফরেস্ট রেঞ্জার কাজী ইশতিয়াক রহমান বলেন, “বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তারা চাইলে বন বিভাগের কাছ থেকে বিনা মূল্যে চারা পেতে পারেন, আমরা সহায়তা করব।”

নড়াইল জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, “নড়াইলে যারা নিঃশ্বার্থভাবে গাছ রোপণ করছেন ভবিষ্যতে তাদের বৃক্ষমেলায় পুরস্কৃত করা যেতে পারে। কারণ তারা সত্যিই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করছেন।”