যশোরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন ও কমিটি গঠন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। অভিযোগ রয়েছে, একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য লোক দেখানো নির্বাচনের মাধ্যমে ১৫ সদস্যের ‘পকেট কমিটি’ গঠন করেছে। যার নেপথ্যে রয়েছেন সাজেদুর রহমান অপু নামের এক যুবক। তিনি নিজেই হয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। অথচ তিনি দুই বছর ধরে তার প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করেননি। শুধু তিনিই নন, কমিটিতে থাকা ১৫ জনের কেউই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা পরিচালনার শর্ত পূরণ করেননি। পৌরসভার নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা চালাচ্ছেন। ফলে এ কমিটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
অন্যদিকে মজার বিষয় হলো নির্বাচন হলো, কমিটিও গঠিত হলো; অথচ যশোরের প্রথম সারির ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এর কিছুই জানে না। অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে প্রথম সারির ব্যবসায়ীদের না জানিয়েই যশোরে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যার নেপথ্যে রয়েছে অন্য কিছু। এতে কমিটির মধ্যেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুমোদিত ১৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ২৫-২৬ অর্থবছরে মাত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠান ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করেছে। বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই দুই-তিন বছর ধরে লাইসেন্স নবায়ন করেনি।
পৌরসভার তালিকা ও নবগঠিত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের কমিটির তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কমিটির সভাপতি গাড়িখানার ‘সূর্যমুখী ফুলঘর অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’-এর মালিক হারুন অর রশিদেরই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা পরিচালনার ট্রেড লাইসেন্স নেই। সাধারণ সম্পাদক এমএম আলী রোডের ৩৬০ ডিগ্রি ইভেন্ট প্ল্যানার্স’-এর স্বত্বাধিকারী সাজেদুর রহমান অপু দুই বছর আগে লাইসেন্স করলেও আজও তা নবায়ন করেননি। ১৫ সদস্যের এ কমিটির মধ্যে তিনজনের একসময় ট্রেড লাইসেন্স থাকলেও তা দুই-তিন বছর ধরে নবায়ন করা হয়নি। বাকিরা পৌরসভার রেকর্ড অনুযায়ী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। অথচ তারাই হয়েছেন যশোরের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা।
এ বিষয়ে কথা হয় ঘোষপাড়ার রূপশ্রী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মালিক প্রীতিলতা সাহা, বেজপাড়ার ওয়েডিং গাইডের মালিক আরাফাত হোসেন, জাস সাউন্ড অ্যান্ড ইভেন্টের মালিক সুজন কুমার রায়, জয়যাত্রা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মালিক সুজনসহ যশোরের আরও কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট মালিকের সঙ্গে। যারা পৌরসভা থেকে স্বীকৃত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায়ী।
তাদের অভিযোগ, একটি গোষ্ঠী ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন’-এর নামে ভূঁইফোড় সংগঠন খুলে ফায়দা লুটতে চাইছে। তাদের অনেকেই এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। কেউ ফুলের ব্যবসায়ী, কেউ ডেকোরেটরের কাজ করেন; আবার কারও কারও নেই কোনো অফিসও। মনগড়া নাম ব্যবহার করে তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন, ফলে গ্রাহকেরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, কমিটি করার আগে পৌরসভায় খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কাদের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা রয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার দরকার ছিল। প্রকৃত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তারা কিছুই করেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে এর নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে।
এ বিষয়ে নবগঠিত কমিটির সভাপতি হারুন অর রশিদ জানান, তিনি মূলত ফুল ব্যবসায়ী। দুই বছর আগে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা শুরু করেছেন। এ সংক্রান্ত তার লাইসেন্স নেই বলে স্বীকার করেন। এছাড়া তিনি বলেন, এ বিষয়ে বেশিরভাগই সাধারণ সম্পাদক জানেন। সকল ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স করতে বলা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান অপু জানান, হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সেটি পৌরসভা থেকে তালিকা নেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করলেও তারা এ বিষয়ে খোঁজ নেননি বলে স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, ভুলবশত অন্য ব্যবসায়ীদের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তবে তাদের রাখা হবে না।
এ বিষয়ে যশোরের পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, সাধারণ ব্যবসা ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে; নবায়ন ফিও তিনগুণ। সাধারণ ব্যবসার আড়ালে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করা অবৈধ। কেউ যদি এ ধরনের কাজ করে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো: জুম্মান হোসেন







