Saturday, December 6, 2025

চলন্ত ট্রেনে দরজা খোলা নিয়ে প্রকৌশলী ও বিমান বাহিনীর অফিসারের মধ্যে হাতাহাতি, পাল্টাপাল্টি মামলা

ট্রেনের কেবিনের দরজা খোলা নিয়ে সরকারি দুটি অফিসের কর্মকর্তাদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনায় যশোর কোতয়ালি থানা ও খুলনার জিআরপি থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের খুলনা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমানকে (৪৪)সহ অন্য প্রকৌশলীকে মারপিটের ঘটনায় আদালতে দায়েরকরা পিটিশন কোতয়ালি থানায় নিয়মিত মামলা হিসাবে রেকর্ড হয়েছে।

অন্যদিকে বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার নাহিদ হাসানকে মারপিট এবং সোনা ও হিরার গহনা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় খুলনা জিআরপি থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৬ আগস্ট দুপুরে যশোর-নড়াইল রুটে রূপসী বাংলা ট্রেনের ‘খ’ নম্বর কেবিনের মধ্যে চলন্ত অবস্থায়। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে একই দিন দুপুরে পৌনে ২টার দিকে যশোর রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মের ওপর।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশিক আহম্মেদ সাকিবের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হল, বিমান বাহিনীর দুই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে। এরা হলেন, মাগুরা সদর উপজেলার পশ্চিম সাহাপাড়ার আব্দুর রউফের ছেলে বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার নাহিদ হাসান (৩৬), তার স্ত্রী স্কোয়াড্রন সাবিহা বিনতে কালাম (৩৫) এবং নাহিদ হাসানের পিতা আব্দুর রউফ (৫৫)। এই আসামিদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন যশোরের আইনজীবী রুহিন বালুজ।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ যশোর সদরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশিক আহম্মেদ সাকিব (৩০) এজাহারে উল্লেখ করেছেন, গত ১৬ আগস্ট ঢাকা থেকে যশোর-বেনাপোল রুটের রূপসী বাংলা ট্রেনের ‘খ’ কেবিনের চারটি সিট নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা করেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চার প্রকৌশলী। ট্রেনটি নড়াইল ছাড়ার পর বিভাগীয় প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান ওয়াশরুমে যান। সে সময় ফোন এলে তিনি কথা বলতে বলতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ভুলক্রমে পাশের কেবিনের দরজা খোলেন। তখন দেখেন কেবিনের মধ্যে একজন নারী তার শিশু সন্তানকে খাওয়াচ্ছে। তা দেখে তিনি বুঝতে পারেন এটি তাদের কেবিন নয়। তিনি ‘সরি’ বলে দরজা বন্ধ করে নিজের কেবিনের দরজার দিকে এগিয়ে যান।

সে সময় আসামি নাহিদ হাসান কেবিন থেকে বের হয়ে চরম খারাপ আচরণ করেন। জিয়াউর রহমান বারবার দুঃখ প্রকাশ করলেও নাহিদ তাকে বারবার মারতে উদ্যত হন। এক পর্যায় চোখ ও মাথায় কিলঘুষি মেরে আহত করেন।

ট্রেনটি ২টা ৪০ মিনিটের দিকে যশোর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছায়। জিয়াউর রহমান উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ট্রেন থেকে নামার সাথে সাথে আসামি তিনজনসহ অজ্ঞাত আরও ৫-৬জন তাদের ওপর আক্রমণ চালান। আব্দুর রউফ একটি হাতুড়ি দিয়ে জিয়াউর রহমানকে মারপিট শুরু করেন। তিনি প্ল্যাটফর্মের মেঝেতে পড়ে যান। এ ঘটনায় ২১ আগস্ট আদালতে মামলা করলে বিচারকের নির্দেশে মঙ্গলবার কোতয়ালি থানায় এজাহার হিসেবে রেকর্ড হয়।

অপর দিকে বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার সাবিহা বিনতে কালামের দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের খুলনা ডিভিশনের নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, একই বিভাগের যশোরের উপ-উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশিক আহম্মেদ, উপশহকারী প্রকৌশলী রাসেল মিয়া, উপশহকারী প্রকৌশলী শাহারিয়া জনি, যশোরের চাঁচড়া রায়পাড়ার হারুন অর রশিদ বাদশার ছেলে শাহারিয়ার সনি, একই এলাকার ইকবাল হায়দার ও শামসুর রহমান জুয়েল।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ আগস্ট ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনে স্বামী-সন্তান ও শ্বশুরকে নিয়ে যশোরে আসছিলেন সাবিহা। নড়াইল স্টেশনে স্বামী সন্তানদের জন্য খাবার কিনতে নামলে জিয়াউর রহমান বিনা অনুমতিতে কক্ষে প্রবেশ করেন। তাকে নিষেধ করলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেন। দুপুর ২টার দিকে ট্রেন যশোরে পৌঁছালে সকল আসামি আবারও বগিতে ঢোকেন। তাদের ওপর মারপিট করা হয় এবং নাহিদের কাছের সোনার চেইন, ব্রেসলেট ও হিরার নাকফুল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। শ্বশুর আব্দুর রউফকে বাধা দিতে গিয়ে তাঁকেও মারপিট করা হয়। পরে আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর