সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত গ্রামের মাটির গন্ধে বড় হওয়া সাবিনা খাতুন বাংলাদেশের নারী ফুটবলের এক উজ্জ্বল প্রতীক। দীর্ঘদিন জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে মাঠ মাতিয়ে আসা সাবিনা শুধু নিজেই নন—এখন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন ভবিষ্যতের কিশোর ফুটবলারদের জন্য। তার গড়া প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ারিয়র স্পোর্টস একাডেমি’ আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখলো।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার সময় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছে একাডেমির ১০ ক্ষুদে ফুটবলার। তারা অংশ নিচ্ছে ব্যাংককের এক্কামাই ইন্টারন্যাশনাল স্কুল মাঠে আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৪ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে।
মূল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে রোববার (১০ আগস্ট)। এ ছাড়া ওয়ারিয়র স্পোর্টস একাডেমি খেলবে আরও কয়েকটি প্রীতি ম্যাচ (ফ্রেন্ডলি), যা আয়োজন করছে আই এফ এল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট। এসব ম্যাচও হবে ব্যাংকক শহরেই। বাংলাদেশের কোনো স্থানীয় ফুটবল একাডেমির জন্য এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ।
বর্তমানে ভুটানের নারী ফুটবল লিগে পারো এফসি’র হয়ে খেলছেন সাবিনা খাতুন। সেখান থেকেই ফোন কলে মাধ্যমে কথা বলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং ওয়ারিয়র স্পোর্টস একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সাবিনা বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে অনেক কিছু জিতেছি, বহু স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছি। তবে এখন আমার সবচেয়ে বড় চাওয়া—নতুন প্রজন্ম যেন আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পায়। সেই লক্ষ্যেই গড়ে তুলেছি এই একাডেমি। এটি শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি আমার স্বপ্নের জায়গা। এখানে প্রতিটি শিশুর চোখে আমি আমার ছোটবেলার প্রতিচ্ছবি দেখি।’
নিজ একাডেমি সম্পর্কে বলতে গিয়ে সাবিনা আরও বলেন, ‘আমি শুধু ফুটবলার গড়তে চাইনি, গড়তে চেয়েছি সাহসী মানুষ। যারা পরিশ্রমে বিশ্বাস রাখবে, দলীয় চেতনায় বিশ্বাস রাখবে, এবং যখন মাঠে নামবে, তখন কেবল গোলের জন্য নয়—বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরার জন্য খেলবে। ওয়ারিয়র স্পোর্টস একাডেমি আমার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের জায়গা। আমি চেয়েছি, আমাদের প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিভাবান শিশুরাও যেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়ানোর সুযোগ পায়। এই একাডেমি সেই পথ তৈরি করছে। আজ তারা বিদেশ যাচ্ছে, কাল তারা হয়তো জাতীয় দলে খেলবে, আর একদিন বিশ্বকাপে আমাদের গর্বের প্রতিনিধিত্ব করবে।’
ওয়ারিয়র স্পোর্টস একাডেমির হেড কোচ পিন্টু কুমার মিত্র, সহকারী কোচ সিরাজ উদ্দিন, ট্রেইনার ফেরদৌস খোকন, ম্যানেজার মেহেদী হাসান এবং টিম লিডার তৌসিফ ইসলাম—সবাই মিলে দীর্ঘ সময় ধরে এই টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি নিয়েছেন। খেলোয়াড় নির্বাচন, অনুশীলন, ভিসা প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে স্পন্সর নিশ্চিতকরণ—সবখানেই সাবিনার ভূমিকা ছিল সরাসরি।
এই সফরের স্পন্সর হিসেবে আছে বাংলা ট্র্যাক সল্যুশন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং রয়্যাল ওরাঞ্জে।
দলে থাকা খেলোয়াড়রা হলেন—আলিফ জামান, সোহাগ হোসেন, সিয়াম ইসলাম, মারুফ বিল্লাহ, আজিজুর রহমান ভূঁইয়া, মুকিদুরজ্জামান, প্রিয়ম বিশ্বাস, রিফাত পারভেজ, নুর হোসেন ও সালাহউদ্দিন রনি।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে ওয়ারিয়র স্পোর্টস একাডেমি। এরপর থেকেই নিয়মিত অনুশীলন, বয়সভিত্তিক প্রশিক্ষণ, স্থানীয় প্রতিযোগিতা এবং প্রতিভা বাছাইয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠে একাডেমির ফুটবলাররা। এ একাডেমিটি বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ওয়ান স্টার মর্যাদা পেয়েছে।







