মাত্র ১৮ বছর বয়সে অপূর্ণ স্বপ্ন নিয়ে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া যশোরের মেধাবী এইচএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়া ছায়াকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন সকলে। সহপাঠীরাও শেষবারের মতো ছায়াকে দেখতে আসেন। এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে যায়। এরআগে বুধবার (৬ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টায় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ছায়া। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও হাসপাতালের বেডে শুয়ে বলে গেছেন ,আমি পরীক্ষা দিতে চাই। কিন্তু জীবন নামের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার কাছে হার মানলেন ছায়া।
বৃহস্পতিবার সকালে যখন ঢাকার হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি দৌগাছিয়ায় পৌঁছায়, তখন গোটা গ্রাম এক অবর্ণনীয় শোকে ডুবে যায়। কান্নায় ভেঙে পড়েন মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা। অনেকেই বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, প্রাণচঞ্চল সেই ছায়া আর নেই। পুরো দৌগাছিয়া গ্রাম শোকাবহ হয়ে ওঠে।
দুপুরে দৌগাছিয়া গ্রামের নিজ গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় জানাজার নামাজ। জানাজায় অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সহপাঠী, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ। ইমামতি করেন আহ্সাননগর বিশ্বাসপাড়া জামে মসজিদের সাবেক শিক্ষক মাওলানা ওলিয়ার রহমান।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইজ্জত আলী মাস্টার, গ্রামের কাগজ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন, কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যাপক আনিসুর রহমান, আখতারুজ্জামান, নূর আলম, যশোর জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওমর ফারুক তারেক, চূড়ামনকাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মিলন, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ, ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান ও মেহেদীসহ বহু মানুষ। ছায়ার বাবা মারফত হোসেন জানাজার শেষে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ জুলাই দুপুরে যশোর শহরের দড়াটানা মোড় থেকে খড়কি এলাকার বোনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন ছায়া। হঠাৎ বৃষ্টির মধ্যে রিকশার সামনের পলিথিন নিজের পায়ের নিচে গুঁজে দিতে গিয়ে নিচু হন। সে সময় ওড়নাটি রিকশার চাকায় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগে। ছিটকে পড়ে যান রিকশার পাদানিতে, অচেতন হয়ে পড়েন। প্রথমে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার ও দীর্ঘ ৮ দিনের লাইফ সাপোর্টে থাকার পর শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানেন ছায়া। শুক্রবার জুমার পর স্থানীয় মসজিদে ছায়ার রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এলাকাবাসী ও শুভানুধ্যায়ীদের দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিশেষ প্রতিনিধি







