মিরপুরের উইকেট নিয়ে গেল কয়েক বছর ধরেই সমালোচনা হচ্ছে। কখনো তা ব্যাটারদের জন্য কঠিন, কখনো আবার ম্যাচের প্রতিযোগিতামূলক চরিত্র নষ্ট হওয়ার অভিযোগ। অভিযোগের শেষ নেই এই উইকেট নিয়ে। যদিও এতদিন পর্যন্ত এসব সমালোচনা হোম অ্যাডভান্টেজের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যেত, তবে এবার আর তা হয়নি। সম্প্রতি পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর এবার প্রকাশ্যেই অসন্তোষ জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
গেল মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই সিরিজ জয় নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। কারণ, সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে এমন উইকেট ছিল যেখানে ব্যাটারদের স্বাভাবিক শট খেলাই ছিল দুঃসাধ্য। তাতে পাকিস্তানের সাদা বলের ক্রিকেটের হেড কোচ মাইক হেসন তো রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তার মতে, আন্তর্জাতিক মানের নয় মিরপুরের উইকেট। দলটির অধিনায়ক সালমান আঘাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তবে সিরিজের শেষ ম্যাচে তুলনামূলক ভালো উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং ভেঙে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে মিরপুরের পিচ নিয়ে আবারও আলোচনায় আগুন লাগে।
গতকাল মিরপুরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বোর্ডের ফ্যাসিলিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান অকপটে শিকার করে নিয়েছেন যে, এই উইকেট টি-টোয়েন্টি খেলার উপযোগী নয়। তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে ১৬০-৭০ রান না হলে ঐ ধরনের উইকেটে খেলা উচিত না। আমরা সব শেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে যেই উইকেটে খেলেছি সেখানেও উইকেট এত ভালো ছিল না। হয়তো আবহাওয়া এবং সময়ের জন্য। তো এটা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। সামনে যদি আমাদের উইকেটে এমন পরিস্থিতি হয় তাহলে চিন্তা ভাবনা করেছি যে, ঢাকার বাহিরেও ভালো উইকেট রয়েছে যেখানে বেশি রান হয় সেখানে আমরা ম্যাচ খেলাতে পারবো।’
এর আগে গেল শুক্রবার বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম উইকেট নিয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘মিরপুরের উইকেট সন্তোষজনক নয়-এটা আমরা সবাই মেনে নিচ্ছি। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের কাজ করতে হবে। হয়তো সম্পূর্ণ মাটি বদলাতে হবে, না হয় উইকেট তৈরির পদ্ধতিতেই পরিবর্তন আনতে হবে।’
এতদিন ধারণা ছিল, বিদেশি দলের বিপক্ষে ‘লো অ্যান্ড স্লো’ উইকেট তৈরি করেই সাফল্য খোঁজে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়া, পরে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমন কন্ডিশনেই সিরিজ জিতেছে স্বাগতিকরা। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর বোর্ড স্পষ্ট করে বলছে-এই কৌশল তাদের নয়।
ফাহিম বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, উইকেট স্পোর্টিং বানানোর চেষ্টা ছিল, কিন্তু তারা পারেননি। এর দায় বা দায়িত্ব যারা উইকেট বানানোর দায়িত্বে ছিলেন তাদের। কারণ, আমাদের বা বোর্ডের দিক থেকে কখনো উইকেট নিচু ও ধীর বানানোর কোনো নির্দেশনা ছিল না। খেয়াল করে দেখেছি, একটু ব্যাটিং বান্ধব, বাউন্সি উইকেট বানাতে বলা হলেও তা অনেক সময় সম্ভব হয় না। এটা সম্ভবত মাটির ধরন, এখানকার আবহাওয়া বা বেশি ম্যাচ খেলার কারণে হয়ে থাকে।’
এদিকে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলও সম্প্রতি উইকেটে ব্যবহৃত কালো মাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, এটি বলের রঙের ওপর প্রভাব ফেলে, ফলে ব্যাটারদের জন্য বল দেখা কঠিন হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে নাজমুল বলেন, ‘উইকেটে ঘাস না থাকায়, বল মাটির সঙ্গে ঘষা খেয়ে সাদা রং হারায়। তখন সেটা ধূসর রং নেয়, যা ব্যাটারদের জন্য স্পষ্ট দেখা যায় না। এটা অবশ্যই একটা সমস্যা।’







