চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে যশোরগামী যাত্রী ছিলেন মৌসুমি। সঙ্গে ছিলো তার চার বছরের কন্যা মরিয়ম। কিন্তু ২০ জুলাই রাতে রহস্যজনকভাবে অচেতন হয়ে পড়েন মৌসুমি। সকালে চোখ খুলে নিজেকে খুঁজে পান খুলনা রেলস্টেশনে কিন্তু পাশে নেই তার আদরের মেয়ে চার বছরের মরিয়ম। এরপর কেটে গেছে ১০ দিন, এখনো মেয়েকে খুঁজে পাননি যশোর শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়ার বাসিন্দা রনি বিশ্বাস দম্পত্তি। এই ১০ দিনে রনি থানার পর থানা, রেলস্টেশনের পর রেলস্টেশন ঘুরেছেন, কিন্তু কোথাও পাননি আশার আলো। কখনো বলা হয়েছে, ‘ঘটনাস্থল নির্দিষ্ট না হলে জিডি নেওয়া যাবে না’, আবার কোথাও জিডি নিতেই অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। বাধ্য হয়ে খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা, পাকশিসহ ৭-৮টি রেলওয়ে থানায় ছোটাছুটি করেছেন তিনি। কোনো লাভ হয়নি। এখন একটি নাম্বার থেকে তার কাছে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হচ্ছে।
রনি জানান, তার স্ত্রী মৌসুমি ও কন্যা মরিয়ম ২০ জুলাই রাতে চিত্রা এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে যশোর আসছিলেন। উল্লাপাড়া পর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও, এরপর কী ঘটেছে তা মনে নেই মৌসুমির। জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখেন, খুলনা স্টেশনে তিনি একা।মেয়ে নেই। রেলওয়ে পুলিশ ও স্টেশন কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি জানান মৌসুমি ও তার পরিবার। কিন্তু দায়িত্ব পালনের বদলে বারবার হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। রনির অভিযোগ, খুলনা স্টেশন থেকে পাঠানো হয় দর্শনায়, দর্শনা থেকে পাকশি। পাকশি থেকে পোড়াদাহ। এরপর চুয়াডাঙ্গা। প্রতিটি জায়গায় একটাই কথা, ঘটনাস্থল আগে নির্ধারণ করুন, তারপর জিডি হবে। এমন পরিস্থিতিতে এক অজানা নম্বর থেকে রনিকে ফোন করে জানানো হয়, দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে তার মেয়েকে ফেরত দেওয়া হবে না হলে ফল হবে ভয়াবহ। শেষমেশ মঙ্গলবার রাতে রনি যশোরের কোতোয়ালি থানায় বিষয়টি জানাতে গেলে সেখানেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। তারা জানান বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশেরই। রেলওয়ে পুলিশ থানা পুলিশ ঘুরে চরম হতাশ ও অসহায় রনি বুধবার দুপুরে যোগাযোগ করেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। পরে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি তাৎক্ষণিক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে রেলওয়ে ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডিআইজি গোলাম রউফকে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
ডিআইজি গোলাম রউফ জানান, রেলওয়ের পক্ষ থেকে পূর্বে বিষয়টি কেউ জানাননি। বুধবার জানতে পেরে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন এবং ভিকটিম পরিবারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। বুধবার রাতে রনি ও তার পরিবারকে সিরাজগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । বর্তমানে মেয়েকে উদ্ধারের জন্য তদন্ত ও তল্লাশি কার্যক্রম শুরু করেছে রেলওয়ে ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট বিভাগ।
বিশেষ প্রতিনিধি







