যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় এক পরিবারের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দিয়েছে। উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাধাদানের অভিযোগ এনেছে। ঘটনাটি এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৪ সালে স্থাপিত হয় এবং এর জন্য জমি দান করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদা বেগম ও তার ভাই জিয়ারুল ইসলাম। তাদের দেওয়া জমির মধ্যে প্রায় ৩৩ শতক জায়গায় বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত জমির কিছু অংশে স্থানীয় এক পরিবার ভবন নির্মাণ শুরু করলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. শামশীরা পারভীন অভিযোগ করেন, ঈদের ছুটির সময় স্থানীয় বাসিন্দা হারুন অর রশিদের দুই ছেলে—ফাহাদ হোসেন সোহাগ ও মামুনুর রশিদ শাহিন—বিদ্যালয়ের প্রায় ৪ শতক জমিতে নির্মাণকাজ শুরু করেন, যার মধ্যে ২ শতক জমি মূল বিদ্যালয়ের বলে দাবি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা বারবার নিষেধ করলেও তারা নির্মাণ বন্ধ করেনি। পরে পুলিশের সহায়তায় কাজ বন্ধ করা হয়।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত পরিবারের সদস্য ফাহাদ হোসেন সোহাগ দাবি করেন, “জমির মালিকানা আমাদের। বিদ্যালয় আমাদের চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে, তাই আমরা নিজেদের জায়গায় ঘর তুলছি। এই জমির একটি অংশ আমরা আগে দান করলেও বাকি জমি এখনো আমাদেরই।” তিনি আরও বলেন, “এসিল্যান্ড ও স্থানীয়রা বিষয়টি পরিদর্শন করে আমাদের দিকেই মত দিয়েছেন।”
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জমিটি স্কুলের সীমানাভুক্ত বলে তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক জানান, থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে এবং তিনি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
তবে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বক্তব্যে মতানৈক্য রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, “জমিটি স্কুলের বলে মনে হয়েছে, তাই প্রধান শিক্ষককে আইনগত পদক্ষেপ নিতে বলেছি।”
অপরদিকে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, “জমিটি বিদ্যালয়ের নয় বলে পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে মনে হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”
প্রতিবেশী ও অভিভাবকদের একাংশ বিদ্যালয়ের পরিবেশে স্থাপনা নির্মাণকে অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেছেন। আবার অন্য পক্ষের অনুসারীরা বলছেন, “যেখানে মালিকানা প্রমাণিত নয়, সেখানে বিদ্যালয়ের নামে দাবি করাও ঠিক নয়।”
এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে জমিতে বর্তমানে ১৪৪ ও ১৪৫ ধারা জারি রাখা হয়েছে। তবে বিরোধ নিষ্পত্তিতে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে বিদ্যালয় চত্বরের এই জমি নিয়ে অস্থিরতা বজায় রয়েছে।
বিশেষ প্রতিনিধি







