Friday, December 5, 2025

যশোরের বাস টার্মিনাল এলাকায় মাদকের রাজত্ব, কিশোর গ্যাংয়ের অভয়ারণ্য শংকরপুর

যশোর শহরের শংকরপুর ও বাস টার্মিনাল এলাকা এখন মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাংয়ের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান থাকা সত্ত্বেও, এসব অপরাধী চক্র একের পর এক অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে—কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে চলছে মাদক বিক্রি, চাঁদাবাজি ও ত্রাসের রাজত্ব।

বিশেষ করে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, পুলিশের ছত্রছায়ায় দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে এসব অপরাধী চক্র।

‘গডফাদার’ জাহাঙ্গীরের নিয়ন্ত্রণে পুরো সিন্ডিকেট

শংকরপুর বটতলা এলাকার ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর এই মাদক নেটওয়ার্কের মূল হোতা। অভিযোগ রয়েছে, তিনি আন্তঃজেলা মাদক সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। তার নির্দেশেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে ৫-৭ জনের একটি মাদক ডেলিভারি টিম। এই টিমে রয়েছে চোর রোস্তমের ছেলে রিপন, বাঁতেন, মুনজিলের ছেলে আলামিন এবং আলাউদ্দিন আলার ছেলে রাজা ওরফে ‘বাবা রাজা’।

‘বাবা রাজা’র নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান

শংকরপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় ‘বাবা রাজা’-র নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি কিশোর গ্যাং, যারা জড়িত ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক পরিবহন ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির কাজে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০-৫০ জন। সদস্যদের মধ্যে রয়েছে জালালের ছেলে ইয়াছিন, বিপ্লব, রিপন, বাদশা, সুজন, ইমরান, সজিবসহ আরও অনেকে। এমনকি আন্তঃজেলা বাসের কিছু হেলপারও এই চক্রের সহযোগী।

‘ইয়াবা সুজন’ নামে পরিচিত একজন শংকরপুর, বটতলা মসজিদ, মেডিকেল কলেজ এলাকা ও ছোটনের মোড়ে ইয়াবা বিক্রি করে। অপরদিকে ফেনসিডিল বিক্রেতা হিসেবে ‘ইমরান’ নামেও একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

মাদকের আড্ডা ‘মাদক হাট’

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সিরাজুল ইসলামের চায়ের দোকানের পেছনে প্রতিদিন বসে ‘মাদক হাট’—যেখানে জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে মাদক কেনাবেচার নিয়ন্ত্রণ হয়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে থেকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রবাসী নারীর বাড়ি দখল ও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

একাধিক অপরাধে জড়িত জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে—যার মধ্যে অন্যতম শহরের কলেজপাড়া এলাকায় প্রবাসী নারী শাহনাজের বাড়ি তালা ভেঙে দখল করে নেয়া এবং নারী পাচার মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকা জোরপূর্বক আদায় করা। ভুক্তভোগীর দাবি, প্রথমে ২০ হাজার ও পরে আরও ৫০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।

পুলিশ কী বলছে?

এই বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত খান বলেন,

“এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারা কৌশলে জামিনে বের হয়ে আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বিষয়টি আমরা মনিটর করছি এবং দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য মাদক কারবারিদের সহযোগিতা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধেও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর