টানা চার দিনের সংঘাতে ৩২১ জন নিহত হওয়ার পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রতিবেশী ইসরায়েল ও সিরিয়া। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম বারাক। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, তুরস্ক, জর্ডান এবং অন্যান্য প্রতিবেশীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসরায়েল এবং সিরিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আমরা দ্রুজ, বেদুইন এবং সুন্নিদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—তারা যেন অস্ত্র সমর্পণ করে সকল নাগরিককে নিয়ে একটি নতুন সিরিয়া গঠনে এগিয়ে আসে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাস এবং কানাডায় অবস্থিত সিরীয় কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সূচনা ঘটে গত মঙ্গলবার, যখন সিরিয়ার সোয়েইদা শহরে একটি পারিবারিক জমায়েতে বন্দুকধারীদের হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হন। হামলাকারীরা ছিল সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট ‘হায়াত তাহরির আল শামস (এইচটিএস)’–এর সদস্য, যারা কট্টরপন্থি সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী।
পরদিন বুধবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সোয়েইদায় সিরীয় বাহিনীকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। তেল আবিব জানায়, সিরিয়ায় সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় দ্রুজ ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের রক্ষায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এর আগে সোয়েইদা অঞ্চলে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দ্রুজ, বেদুইন ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘাত চলছিল। সংঘাত থামাতে সেনাবাহিনী পাঠান প্রেসিডেন্ট আল শারা, কিন্তু তাদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
সোয়েইদার পরিস্থিতি বর্তমানে মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। খাবার, পানি, বিদ্যুৎ, মোবাইল ও ইন্টারনেট—সবকিছুর সরবরাহ প্রায় বন্ধ। ২৮ বছর বয়সী স্থানীয় যুবক মুদার রয়টার্সকে বলেন, আমরা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছি। গত চার দিন ধরে কোনো খাবার নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই—এক কথায় কিছুই নেই।
উল্লেখ্য, দ্রুজ সম্প্রদায় ইসলামের শিয়া শাখার একটি বিশেষ মতবাদ অনুসরণ করে। নবম শতকের শেষভাগে ইরানের সুফি সাধক ইসমাইল নাশতাকিন আদ-দারাজি এই মতবাদের সূচনা করেন। দ্রুজরা নিজেদের ‘আহলে তাওহিদ’ বা একেশ্বরবাদী হিসেবে পরিচয় দেন। তারা আল্লাহ, হযরত মুহম্মদ (সা.) এবং প্রথম চার খলিফার প্রতি বিশ্বাস রাখেন, তবে বিশ্বাস করেন—সৃষ্টিকর্তা মানুষের মধ্যেই বিরাজমান।
অনলাইন ডেস্ক/আর কে-০৪







