Friday, December 5, 2025

সাঁতার না জানা, অসাবধানতা ও গাফিলতিতে প্রাণ হারাচ্ছে শিশু

নড়াইল প্রতিনিধি: সাঁতার না জানার পাশাপাশি অভিভাবকদের অসাবধানতা ও গাফিলতির কারণে নড়াইলে একের পর এক শিশু ও কিশোর প্রাণ হারাচ্ছে পানিতে ডুবে। শুধুমাত্র চলতি বছরের জুন মাসেই জেলায় ৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। আর গত ১৫ মাসে জেলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৮ জন শিশু ও কিশোর। তাদের মধ্যে ৮ জন শিশু এবং ১০ জন কিশোর।

গত ১৮ জুন নড়াইল সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের বেদভিটা গ্রামে ১০ বছরের আফিয়া ও ৮ বছরের মিম একই পরিবারের সদস্য। পরিবারের লোকজন ব্যস্ত থাকাকালে তারা কাউকে কিছু না বলে বাড়ির পাশের একটি নতুন খনন করা পুকুরে গোসল করতে নামে। প্রায় এক ঘণ্টা পর খোঁজাখুঁজির পর পুকুর থেকেই তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

এর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে, ৪ জুন কালিয়ার আটলিয়া গ্রামে একই পরিবারের দুই শিশু—২২ মাস বয়সী রাহাদ ও রিহান—অভিভাবকদের অজান্তে বাড়ির সামনে পুকুরে নেমে ডুবে মারা যায়। ঈদুল আজহার মাত্র তিন দিন আগে ঘটে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা।

এছাড়া ১১ জুন লোহাগড়ার ঝিকড়া গ্রামে ২ বছর বয়সী আয়েশা, ১০ জুন কালিয়া পৌর এলাকার শ্রেষ্ঠ ঘোষ, ১ এপ্রিল চাচই গ্রামে ৭ বছরের ফাতেমা এবং ২০ এপ্রিল সদরের বাহিরগ্রামে তিন্নি (৫) ও তানহা (৩) নামের দুই বোন ঘেরে পড়ে মৃত্যুবরণ করে।

চিত্রা নদীসহ জেলার বিভিন্ন জলাশয়ে গোসল করতে গিয়ে প্রাণ গেছে আরও বেশ কিছু কিশোরের। ২৬ জুন ৯ম শ্রেণির ছাত্র আসমাউল মীর, ১৪ মে ৫ম শ্রেণির ছাত্র রাজ শেখ, ১১ মে মাদ্রাসা ছাত্র রায়হান শিকদার নদীতে ডুবে মারা যান। রাজ ও রায়হান—দুজনই ভালোভাবে সাঁতার জানত না বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

এই মৃত্যুগুলোকে ‘প্রতিরোধযোগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন নড়াইলের অভিজ্ঞ নাগরিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সামাজিক বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মনির মল্লিক বলেন, “শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর জন্য প্রধানত দায়ী অভিভাবকদের অসচেতনতা। পাশাপাশি শহরাঞ্চলে পুকুর ভরাট হওয়ায় শিশুরা সাঁতার শেখার সুযোগও হারাচ্ছে।”

জেলা ক্রীড়া অফিসার মো. কামরুজ্জামান জানান, “সরকারিভাবে প্রতি বছর মাসব্যাপী সাঁতার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নেওয়া হয়। এ বছর মে মাসে ৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জুলাই থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পৌরসভার কালিদাস ট্যাংক পুকুরে সাঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তবে আরও ব্যাপকভাবে কাজ করতে প্রশিক্ষক নিয়োগ ও সম্মানীর ব্যবস্থা প্রয়োজন।”

নড়াইলের জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, “সাঁতার শেখা এখন সময়ের দাবি। শুধু জেলা পর্যায়ে নয়, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে—তাদের সন্তানরা সাঁতার না জানলে যেন পুকুর, নদী বা ডোবার কাছে না যায়।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, পরিবার ও সমাজকেও দায়িত্ব নিতে হবে। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে তা নজরে রাখা, প্রয়োজনে ঘরের উঠানেই পানির উৎস ঢেকে রাখা এবং সময়মতো সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থাই পারে এই ভয়াবহ মৃত্যু ঠেকাতে। নয়তো, প্রতিবছরই এমন মর্মান্তিক ঘটনায় নড়াইলে শোকের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর