আঃ সবুর আল-আমিন, কপিলমুনি (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার পাইকগাছার হরিঢালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতির একতরফা ও হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তার সিদ্ধান্তে বহিষ্কৃত হয়েছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক), শিক্ষক প্রতিনিধি, আরও এক শিক্ষক এবং এক অফিস সহকারী। একইসঙ্গে আরও দুই সহকারী শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শো-কজ) দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাবে বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে।
শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে কপিলমুনি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষক এই অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহকারী প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্বে) এম এম হাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, বহুল আলোচিত ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের পদত্যাগের পর, বিদ্যালয় পরিচালনায় স্থবিরতা দেখা দেয়। গত ফেব্রুয়ারিতে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর বোর্ডের নির্দেশনায় অধ্যাপক ড. মো. মোকাররম হোসেনকে সভাপতি করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সভাপতি ড. মোকাররম কমিটি গঠনের পর থেকেই সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পুনর্বাসনের চেষ্টা শুরু করেন। তার অংশ হিসেবে কোনো বৈধ এজেন্ডা ছাড়াই সভা ডাকেন, নোটিশ খাতা ও রেজুলেশন বই নিজের কাছে নিয়ে যান এবং শিক্ষক প্রতিনিধি ও সদস্য সচিবকে জোর করে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।
বহিষ্কৃত শিক্ষকরা জানান, সভাপতি গত ২৪ জুন হঠাৎ সহকারী প্রধান শিক্ষক এম এম হাফিজুর রহমান, শিক্ষক প্রতিনিধি প্রকাশ ঘোষ এবং এক অফিস সহকারীকে বহিষ্কার ও শো-কজ করেন। এরপর ১০ জুলাই তাদের স্থলে নিজ অনুগত শিক্ষক নাজমুন্নাহারকে সহকারী প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্বে) এবং রেবেকা সুলতানাকে কমিটিতে কো-অপ্ট করেন। একইসঙ্গে দুই শিক্ষক অনিশ চক্রবর্তী ও সুরঞ্জনা রায়কেও শো-কজ করা হয়।
এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ১৩ জুলাই বিদ্যালয়ে চলমান অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষকরা আরও অভিযোগ করেন, সভাপতি নিয়ম ভেঙে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় অবৈধভাবে যুক্ত করেছেন। অথচ তাকে ফিরিয়ে আনতে অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত প্রয়োজন ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা বলেন, সভাপতির এসব সিদ্ধান্ত বিদ্যালয় পরিচালনার নীতিমালার পরিপন্থী। তিনি একদিকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে এম এম হাফিজুর রহমানকে মেনে নিয়েছেন, আবার অন্যদিকে তার ওপর শাস্তি আরোপ করেছেন এবং সাবেক প্রধান শিক্ষককে ফেরত আনার চেষ্টা করছেন—যা সাংঘর্ষিক ও উদ্দেশ্যমূলক।
তারা দাবি করেন, সভাপতির এই অনিয়ম-দুর্নীতি ও হঠকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিদ্যালয়কে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তারা এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এর আগেও সরকারি বই বিক্রি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। ১৬ জন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে ১৪ জন তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি স্বপন কুমার বিশ্বাস পদত্যাগ করে গোপনে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, এখনো তদন্ত ছাড়া তার পক্ষে কাজ করছেন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি, যা আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।







