Saturday, December 6, 2025

নড়াইলে কুখ্যাত ডাকাত সর্দার তুষার স্ত্রীসহ আটক

নড়াইল ও লোহাগড়া প্রতিনিধি: নড়াইলে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের অন্যতম শীর্ষ সর্দার তুষার শেখ ওরফে ‘গোল্ড হৃদয়’ (৩৫) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া বেগম ওরফে জান্নাতকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব ও পুলিশ।

রোববার (৬ জুলাই) রাতে লোহাগড়া থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম।

তিনি জানান, ভোররাতে ঢাকার আজমপুর এলাকায় র‍্যাব-৪ ও লোহাগড়া থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তুষারকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রামে অভিযান চালিয়ে ডাকাতির সময় লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকারসহ তার স্ত্রী জান্নাতকে গ্রেফতার করা হয়।

তুষার শেখ লোহাগড়ার দিঘলিয়া ইউনিয়নের নোয়াগ্রামের ওয়াদুদ শেখের ছেলে। তার দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত খাগড়াছড়ির ইসলামপুর এলাকার নূর মাঝির মেয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি লোহাগড়ার ঘাঘা গ্রামে প্রবাসী বাবলু শেখের বাড়িতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে তার স্ত্রীকে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করে। ঘটনার চার দিন পর একই উপজেলার নোয়াগ্রামে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবুল হাসানের বাড়িতে একই কায়দায় দ্বিতীয় দফায় ডাকাতি চালায় দলটি। দু’টি ঘটনায় থানায় পৃথক মামলা দায়ের হয়।

ঘাঘা গ্রামের মামলার সূত্র ধরে তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে তুষারের নেতৃত্বে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সংশ্লিষ্টতা মেলে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকায় অভিযান চালানো হয়। তার তথ্যেই জান্নাতকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে একটি স্বর্ণের চেইন ও কানের একজোড়া দুল উদ্ধার করা হয়েছে।

তুষার শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, “শুরুতে হাঁস-মুরগি, ফল চুরি করতাম। পরে চুরির মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে ভাবি আসমা বেগমের কাছ থেকে কয়েকটি বাড়ির তথ্য পাই। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ঘাঘা ও নোয়াগ্রামে ডাকাতির পরিকল্পনা করি। অস্ত্র হাতে নিয়ে লোকজন জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণ ও মোবাইল ফোন লুট করি।”

তিনি আরও বলেন, “ডাকাতির মাল ভাগ করে দিই। আসমাকে ৩ হাজার টাকা দিই, বাকিদের সমান ভাগ। পরে স্বর্ণালংকার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। দুইটি ডাকাতির পর আমি আর কোনো অপরাধ করিনি, এখন ভালো হয়ে গেছি।”

প্রবাসীর স্ত্রী শেফালী বেগম বলেন, “আমার স্বামী বিদেশে কষ্ট করে টাকা পাঠিয়েছেন। ঘর বানানোর জন্য ৬ লাখ টাকা বাসায় রেখেছিলাম। আসমা প্রায়ই বাড়িতে আসতো। তাকেই বিশ্বাস করে সর্বনাশ করেছি।”

লোহাগড়া থানার ওসি শরিফুল ইসলাম বলেন, “তুষারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতো। দামি মোটরসাইকেল, ঘড়ি, স্বর্ণের গহনা, মোবাইল ব্যবহার করতো এবং নগদ টাকার ভিডিও পোস্ট করতো।”

তিনি আরও বলেন, “তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা রয়েছে। আমরা একটি ডাকাতির মামলার তদন্ত করতে গিয়েই তাকে চিহ্নিত করি এবং র‍্যাবের সহায়তায় গ্রেফতার করি। ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের ধরতে এবং লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর