নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলের লোহাগড়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগ তুলে এক দম্পতিকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করা হয়েছে। একইসঙ্গে জমিজমা বিক্রি করে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় মাতব্বররা। এ অমানবিক ঘটনা ঘটেছে লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের বাতাসি গ্রামে।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে। তবে শুক্রবার (২১ জুন) এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি একটি অমানবিক ও মধ্যযুগীয় সালিশ।
জানা গেছে, বাতাসি গ্রামের বাসিন্দা নিজামুদ্দিন (৩০) এর স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ ছিল। সম্প্রতি ওই নারী স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে চলে যান। কিছুদিন পর তিনি পুনরায় নিজামুদ্দিনের ঘরে ফিরে আসেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহীদ খানের বাড়িতে এক সালিশ বসে।
সালিশে উপস্থিত মাতব্বররা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে স্বামী নিজামুদ্দিনকে ‘স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ’ হওয়ার দায়ে জুতাপেটা করেন। এরপর তাকেই দিয়ে তার স্ত্রীকে মারতে বাধ্য করেন। সালিশ শেষে উভয়কে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী নারী আম্বিয়া বেগম বলেন, “আমার ১০ বছরের ছেলে নাফিজ তখন আমার পাশে ছিল। সে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল ‘আম্মুকে মারবেন না’। কিন্তু কারও মন গলেনি। ছেলের সামনেই আমাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সালিশে উপস্থিত আতাউর রহমান বলেন, “শালিশে নিজামকে ২০টি এবং তার স্ত্রীকে ১০টি জুতার বাড়ি দেওয়া হয়। পরে তাদের গ্রাম ছাড়তে বলা হয়। এ শালিশ সম্পূর্ণ অমানবিক। আইনের কোথাও একসঙ্গে শারীরিক নির্যাতন ও নির্বাসনের শাস্তি দেওয়া যায় না।”
তবে সালিশে নেতৃত্ব দেওয়া শহীদ খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “পরকীয়ার কারণে গ্রামে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। তাই গ্রাম্য সালিশে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতামত অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”