আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে ঘিরে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা ও হতাশা। আজ রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে অংশ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “এবারের বাজেটেও নতুন কোনো চমক নেই। বরং আগের অতিমূল্যায়িত ও ভুয়া ব্যয়ভিত্তিক প্রকল্পগুলোর ধারাবাহিকতাই বজায় রাখা হয়েছে।”
ড. দেবপ্রিয় বলেন, বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি এবং পাচারকৃত অর্থ বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার মতো সাহসী উদ্যোগ নিলে সেগুলো হতে পারত রাজস্ব আহরণের নতুন উৎস। তবে এই সরকার তার শাসনকালে ৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে বিদেশী ঋণের চাপ কিছুটা হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের কর কাঠামো এখনো বৈষম্যনির্ভর। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ স্থবির, আর বাজেটে নতুন কোনো অর্থনৈতিক কৌশল নেই। রাজস্ব খাতে দক্ষতা না থাকলে করদাতাদের উৎসাহ হারিয়ে যাবে।”
ছায়া সংসদের প্রধান আলোচ্য ছিল ‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’। এ আয়োজনে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয় ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজকে পরাজিত করে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, “আমাদের বাজেট বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি। বিগত সরকারের সময় বাজেটকে লুটপাটের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের রেখে যাওয়া প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণের বোঝা এখন জাতিকে বহন করতে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এখনই উচিত অর্থপাচারকারী, দুর্নীতিবাজ ও ঋণ খেলাপিদের নাম প্রকাশ করে দৃশ্যমান শাস্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা।”
সাবধানবার্তা দিয়ে কিরণ বলেন, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হবে, যা বাজেট বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এনবিআরের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে বড় চ্যালেঞ্জ।”
অর্থনীতির এই ক্রান্তিকালে জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের সক্ষম বাজেট তৈরি করা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এক কঠিন পরীক্ষায় পরিণত হচ্ছে বলেই মত দিয়েছেন আলোচকরা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ না বাড়ালে আগামী বাজেটও “নতুন মোড়কে পুরাতন গল্প” হয়ে থাকবে বলে মত তাদের।







