গ্রামের কাগজ: জন্মের পরই বাবাকে হারিয়েছে ছয় বছরের সজিব। তার ছিল আদরের ছোটবোন পাঁচ বছরের খাদিজা। তাদের একসাথেই বেড়ে ওঠা। তাদের সকাল শুরু হতো একসাথেই। সারাদিন থাকতো একসাথে। রাতও কাটতো একসাথে। কে জানতো একসাথেই খেলতে খেলতে হারিয়ে যাবে সেই ছোট বোনটি। তাই হলো, সজিবের চোখের সামনে বিস্ফোরিত হল বল, আর তার ঠিক পাশেই লুটিয়ে পড়ে প্রিয় বোন খাদিজা।
রোববার রাতে দুই ভাইবোন একই বিছানায় ঘুমায়। সোমবার ছোট বোন ঘুমালো কবরে, সজিবের ঠাঁই হলো হাসপাতালের মেঝেতে। সেই নিঃসঙ্গতায় যেন সজিবের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। ছোট বোনের কথা মনে করেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছে সে।
বলছিলাম সোমবার সকালে বোমার বিস্ফোরণে বেঁচে যাওয়া শংকরপুরের সজিবের কথা। বর্তমানে সে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে শিশু খাদিজাকে সোমবার রাত নয়টায় নিজ এলাকায় জানাজা শেষে তালতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। একইদিন রাতে এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন তাদের মা সুমি খাতুন।
মা সুমি জানান, সজিবের খেলাধুলা, মাদ্রাসায় যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া সবকিছুতেই ছিল খাদিজার সঙ্গ। এমনকি রাতে ঘুমাতোও একসাথে। একই মাদ্রাসায় পড়তো তারা। হাসপাতালে বারবার তার ছোট বোনকে খুঁজজে সজিব। তার বোন যে মারা গেছে কখনো কখনো সজিব ভুলেও যাচ্ছে। খেলার জন্য ডাকছে খাদিজাকে।
তিনি আরও জানান, সজিবের জন্মের পরই বাবা সুজন মারা যান। কিন্তু এ পরিবার তিনি ছাড়েননি। এরপর তিনি দেবর শাহাদাৎকে বিয়ে করেন। শাহাদৎ সারাদিন রিকশা চালান। অন্যদিকে তিনি বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করেন। মেয়ের করুণ মৃত্যুর কথা মনে করেই তিনি কাদতে শুরু করেন।
শাহাদৎ জানান, হাসপাতালের বেডে চুপচাপ শুয়ে থাকছে সজিব। কারও সাথে তেমন কথা বলছে না। তার চোখের পানি থামছেই না। শিশুসুলভ হাসিটা আর নেই মুখে।
তিনি বলেন, সজিবের চিকিৎসা করাতে তার কষ্ট হয়ে পড়ছে। তিনি বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে, শংকরপুরে ককটেল বিস্ফোরণে পাঁচ বছরের শিশু খাদিজা নিহতের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেছেন মা সুমি খাতুন। তবে, এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা হয়নি।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন, সোমবার সকাল আটটায় তার মেয়ে খাদিজা ও ছেলে সজিব বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত একটি জায়গায় খেলা করছিল। এমন সময় তারা লাল রঙের একটি গোলাকার বস্তু দেখতে পায়। পরে সেটাকে বল ভেবে ঘরে নিয়ে এসে খেলা শুরু করে। এমন সময় ওই বল সাদৃশ্য ককটেলটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। পরে তিনি ঘরে এসে দেখেন দুই সন্তানই জখম অবস্থায় পড়ে আছে। তাৎক্ষণিক তাদেরকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। যাওয়ার পথেই খাদিজার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে, খাদিজার নিহতের পর থেকে এলাকায় ককটেল আতংক বিরাজ করছে। আরও ককটেল থাকতে পারে এ আশংকায় অনেকে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। ওই ককটেল রহস্য এখনো কাটেনি। কেউ কেউ দাবি করছেন সন্ত্রাসী মুসার ককটেল ছিল ওটি। যা শাহাদৎ নিজ জিম্বায় রেখেছিলেন। পরে তা বিস্ফোরিত হয়। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহাদৎ।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল বলেন, ককটেলটি কীভাবে এলো তা খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।







