Saturday, December 6, 2025

জোয়ার-ভাটার সঙ্গেই বাঁধা জীবন

নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইল থেকে খুলনায় বাঁশ পৌঁছাতে হয় নদীপথে। তবে এই যাত্রা নির্ভর করে জোয়ার-ভাটার ওপর। ভাটার সময় যাত্রা শুরু, ছয় ঘণ্টা পরে জোয়ার এলে নদীর তীরে বাঁশ বেঁধে রেখে অপেক্ষা। আবার ভাটা আসলে যাত্রা শুরু হয়। এভাবে ৫০ মাইল পাড়ি দিতে হয় অন্তত ১৬টি জোয়ার-ভাটা পেরিয়ে। সময় লাগে প্রায় দুই দিন।

চলাচলের এই প্রথাগত উপায়ে বাঁশ বহনের সঙ্গে জড়িত নড়াইল সদরের ফেদি গ্রামের বাদশা মিয়া, চালিতাতলার টুলু মোল্যা ও মহিষখোলার বাবু শেখ বলেন, “২০ বছর ধরে এই কাজ করছি। আমাদের জীবনটাই যেন জোয়ার-ভাটার সঙ্গে বাঁধা।” তারা জানান, প্রতি চালানে ৭০০ থেকে ২ হাজার পিচ বাঁশ থাকে। দূরত্ব অনুযায়ী প্রতি বাঁশে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান শ্রমিকরা।

জোয়ার-ভাটার সঙ্গেই বাঁধা জীবননড়াইলের মাটি বাঁশ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় জেলায় বাঁশ উৎপাদনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় ২৯১ হেক্টর জমিতে ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৯৮৪ পিচ বাঁশ উৎপাদিত হয়েছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯৬ হেক্টরে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৬৭০ পিচ।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অন্তত ২০টি বাঁশের হাট। এর মধ্যে চিত্রা নদীর পাড়ে পলইডাঙ্গার হাট সবচেয়ে বড়। প্রায় ১২ একর জায়গা জুড়ে বসা এই হাটে প্রতি রোববার ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার বাঁশ কেনাবেচা হয়। যশোর, খুলনা, বাগেরহাটসহ আশেপাশের জেলার অর্ধশতাধিক পাইকার এখানে বাঁশ কিনতে আসেন।

পলইডাঙ্গার শ্রমিক রহমান ফকির বলেন, “বাঁশ নামানো, স্তুপ সাজানোসহ প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করি।” খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ব্যবসায়ী হোসেন ব্যাপারি জানান, “১২ বছর ধরে এখান থেকে বাঁশ কিনে নদীপথে খুলনায় নিয়ে যাই। পরিবহন ব্যয় কম হওয়ায় লাভও বেশি হয়।”

স্থানীয় সেন্টু কাজী বলেন, “প্রতি রোববার পলইডাঙ্গায় যেন উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। এখানে অনেকেই বাঁশ কাটার কাজ করে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।”

এদিকে নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জসীম উদ্দীন জানান, “নড়াইলের উঁচু জমি ও মাটি বাঁশ চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে বিপুল পরিমাণে বাঁশ উৎপাদন হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। আমরা চাষিদের পরিকল্পিত চাষে উৎসাহিত করছি।”

তিনি আরও বলেন, নড়াইলের বাঁশ স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। বাঁশের ব্যবহার রয়েছে ঘর নির্মাণ, পানের বরজ, সবজির মাচাঙ, মাছ ধরার সরঞ্জাম ও হস্তশিল্প তৈরিসহ নানামুখী কাজে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর