Friday, December 5, 2025

বান্দরবানে মেঘলা মিনি চিড়িয়াখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ, বন্যপ্রাণী হস্তান্তর

নাজমুল হুদা, বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবানের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মেঘলায় অবস্থিত মিনি চিড়িয়াখানাটি আদালতের নির্দেশে স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে থাকা সব বন্যপ্রাণীকে চট্টগ্রামের দুলহাজরা সাফারি পার্কে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে বান্দরবান জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এ.এস.এম এমরান-এর আদেশের ভিত্তিতে চিড়িয়াখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং প্রাণীগুলো স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বান্দরবানে মেঘলা মিনি চিড়িয়াখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ, বন্যপ্রাণী হস্তান্তরস্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কোনো সরকারি অনুমোদন ছাড়াই সেখানে ভাল্লুক, সজারু, হরিণ, বনমোরগ, বানর, সাপসহ বহু বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী খাঁচায় আটকে রাখা হয়েছিল। এসব প্রাণীকে অন্ধকার ও সংকীর্ণ খাঁচায় অমানবিকভাবে রাখা হতো, ছিল না পর্যাপ্ত খাবার বা চিকিৎসা ব্যবস্থাও।

সাম্প্রতিক একটি ভিডিওতে একটি গুরুতর অসুস্থ ভাল্লুকের অবস্থা প্রকাশ পেলে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ দেখা দেয়।

বান্দরবানে মেঘলা মিনি চিড়িয়াখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ, বন্যপ্রাণী হস্তান্তরবন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তা নুর জাহান বেগম জানান, “সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, চিড়িয়াখানাটির কোনো বৈধ অনুমোদন নেই। প্রাণীদের আয়না ঘরের মতো অন্ধকার খাঁচায় রাখা হচ্ছিল, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ (সংশোধিত ২০১৭) অনুযায়ী, এমন কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

দুলহাজরা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি অফিসার ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইন জানান, “একটি ভাল্লুকের পায়ে গুরুতর ফাঙ্গাস সংক্রমণ হয়েছে। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে প্রাণীটি মারা যেতে পারত।”

প্রাণীগুলোকে ঘুমপাড়ানি ইনজেকশন দিয়ে নিরাপদে পার্কে স্থানান্তর করা হয়। প্রথম দফায় ২টি অসুস্থ ভাল্লুক ও পরবর্তী ধাপে ১৩টি মায়া হরিণকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মেঘলা এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ার বাসিন্দা রিপন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “৫-৬ বছর আগেও এখানে অনেক ধরনের বন্যপ্রাণী ছিল। কিন্তু খাঁচাগুলো এত ছোট ছিল যে গরমে প্রাণীগুলো কষ্ট পেত। খাবারও ঠিকমতো দিত না।”

বান্দরবানে মেঘলা মিনি চিড়িয়াখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ, বন্যপ্রাণী হস্তান্তর‘সেভ দ্য ন্যাচার অব বাংলাদেশ’-এর চেয়ারম্যান এ.এন.এম. মোয়াজ্জেম রিয়াদ বলেন, “এই চিড়িয়াখানা বন্ধ এবং প্রাণীগুলোর মুক্তি আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল। এটি শুধু বান্দরবান নয়, সারাদেশে প্রাণী অধিকার রক্ষায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

তিনি জানান, “গীরিছায়া, রাঙামাটি বোটানিক্যাল গার্ডেন, গজনী অবকাশ কেন্দ্রসহ আরও কয়েকটি জায়গায় বন্যপ্রাণী বন্দির অভিযোগ রয়েছে। অচিরেই এসব ক্ষেত্রেও আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

বান্দরবানের মেঘলা মিনি চিড়িয়াখানা বন্ধ এবং বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকল। এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে অবৈধ চিড়িয়াখানা ও প্রাণী নিপীড়নের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন পরিবেশবিদরা।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর