Saturday, December 6, 2025

আগুনের ফাঁদে যশোর: অগ্নিনির্বাপণে পিছিয়ে থাকায় বাড়ছে প্রাণহানির শঙ্কা

যশোর, একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জেলা শহর, আজ ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকির মুখোমুখি। অপরিকল্পিত নগরায়ন, সরু রাস্তা, পানির উৎস সংকট ও আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামের অভাব—সব মিলিয়ে শহরটি যেন এক ভয়ংকর অগ্নি চেম্বারে পরিণত হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট জাবির ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু যশোর শহরের বিপদাপন্ন অবস্থার ভয়াবহ চিত্র স্পষ্ট করে দেয়। ১৬ তলা ঐ হোটেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস, টার্ন টেবল লেডার আনতে হয় ৬৪ কিলোমিটার দূরের খুলনা থেকে। এই ঘটনা ভবিষ্যতের জন্য এক কঠিন বার্তা—কিন্তু যশোর প্রস্তুত নয়।

দ্রুত বর্ধনশীল যশোর শহরে বিগত ২০ বছরে গড়ে উঠেছে শতাধিক সুউচ্চ ভবন। যদিও অনুমোদনের সময় ফায়ার প্লান সঠিক ভাবে নেয়া হয়েছে কিনা ? কিংবা বাস্তবায়নের বেলায় তা কতটা ছিল উপেক্ষিত! সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। ।

শহরবাসী তসলীম উর রহমান মনে করেন, “যশোরে আগুন লাগলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। পুকুর কমে গেছে, পানি নেই, যন্ত্রপাতির ঘাটতি আছে—সব মিলিয়ে এটি মারাত্মক ঝুঁকি।”

রাজনীতিক জিল্লুর রহমান ভিটুর ভাষায়, “আমরা আগ্নেয়গিরির উপর বাস করছি। ব্যবস্থা না নিলে বড় বিপর্যয় অনিবার্য।”

যশোর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ জানান, আধুনিক সরঞ্জামের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। ভবন মালিকদেরও দেয়া হচ্ছে পরামর্শপত্র। তবে সরঞ্জাম না এলে কার্যকর ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয় বলে মত তার।

অন্যদিকে যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান জানান, এখন থেকে পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। তবে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব ফায়ার সার্ভিসের বলে জানান তিনি।

শুধু আবাসিক ভবন নয়, ঝুঁকির তালিকায় আছে বেনাপোল স্থলবন্দর, যশোর বিমানবন্দরসহ ১২টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও। এর মধ্যে ১০টি কেপিআই স্থাপনার ঝুঁকি মোকাবিলায় সুপারিশ পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

যশোর শহরের বাসিন্দাদের দাবি একটাই—আর কোনো ট্র্যাজেডি নয়। প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে আধুনিক ফায়ার সার্ভিস, সুনির্বাচিত নগর পরিকল্পনা এবং ভবন নির্মাণে কঠোর নিয়ম পালন। নইলে এই প্রাচীন শহরটি পরিণত হবে একটি অনিয়ন্ত্রিত দাবানলে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর