নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে বিভিন্ন গ্রামে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। হ্যান্ড টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হওয়ায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পানির অভাবে সংসারের কাজকর্মসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন গ্রামবাসীরা।
নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের নাওরা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো হ্যান্ড টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। গত ১৫ দিন ধরে এই সংকট চলছে, যা এর আগে কখনও ঘটেনি। রমজান মাসের মাঝামাঝি থেকে এই সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানির সংকটের কারণে গ্রামবাসীরা বাধ্য হয়ে ইরি ব্লক থেকে সাবমার্সিবল মোটরের পানি সংগ্রহ করে দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাচ্ছেন।
গ্রামের প্রবীণ আবুবক্কর মোল্যা বলেন, ‘গত ১৫ দিন ধরে এ গ্রামের কোনো টিউবওয়েল দিয়ে পানি উঠছে না। এখন মাঠের ইরি ব্লকের স্যালো মেশিন থেকে পানি এনে খাবার ও সংসারের কাজকর্ম চালাতে হচ্ছে। আমরা চরম দুর্ভোগে আছি।’
একই গ্রামের কৃষক ইদ্রিস বলেন, ‘এতো বড় পানি সংকট আগে কখনও হয়নি। এবার খুব বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোনো বাড়ির টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। পুকুরগুলোতেও ব্যবহারযোগ্য পানি নেই। সবাই মাঠের ব্লকের স্যালো মেশিন থেকে পানি এনে কাজ চালাচ্ছে।’
গৃহিণী সুফিয়া জানান, ‘আগে আমরা টিউবওয়েল দিয়ে সহজেই পানি তুলতে পারতাম, কিন্তু এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।’
শহর থেকে ঈদ করতে গ্রামে আসা অনেকেই পানির সংকটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
নাওরা গ্রামে প্রায় ৬০-৬৫টি পরিবারের বসবাস। কৃষিনির্ভর এই গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪০০। এখানে ৬৫টির মতো হ্যান্ড টিউবওয়েল, ছোট-বড় প্রায় ১৫টি পুকুর ও দুটি মসজিদ রয়েছে।
পরিবেশবিদদের মতে, অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ, ভূ-গর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত উত্তোলন, এবং সারফেস ওয়াটার সংরক্ষণে উদাসীনতার কারণেই এমন চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তারা মনে করেন, এই সমস্যা সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, নড়াইল সদরের উত্তরাঞ্চল এবং লোহাগড়ার পশ্চিম এলাকায় সুপেয় পানির স্তর প্রতিবছর ১০ থেকে ১১ ফুট নিচে নেমে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও এই এলাকায় ১৫৯ থেকে ১৭০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর পাওয়া যেত। অথচ এখন পানির জন্য আরও গভীরে যেতে হচ্ছে।
তাদের মতে, গত কয়েক বছরে নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ২০ থেকে ২৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে বহু হ্যান্ড টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত সমাধানের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।







