হেডিংলিতে বেন স্টোকসের কাভার ড্রাইভ… উল্লাসে ফেটে পড়েছে পুরো মাঠ। কলকাতায় শোয়েব আখতারের বলে উড়ে গেল শচীন টেন্ডুলকারের স্টাম্প, চারশো রান নিয়ে ব্রায়ান লারার উল্লাস কিংবা মুম্বাইয়ে প্রচণ্ড রোদের নিচে দাঁড়িয়ে ডিন জোন্সের মহাকাব্যিক ইনিংস। শেন ওয়ার্নের ৭০০, মুরালিধরনের ৮০০—সাদা পোশাকের ক্রিকেট দেখেছে কত রঙ, কত হাসি-আনন্দ আর বেদনার কাব্য।
কারও কাছে এটাই ক্রিকেট। পাঁচ দিনের ক্লাসিকাল লড়াই, যেখানে ধৈর্য, সংগ্রাম, নিষ্ঠা আর ক্রিকেটীয় মেধার নিখুঁত সমন্বয় থাকে। তাদের মতে, এটাই ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, জেন্টলম্যান গেমের সবচেয়ে সুন্দর রূপ।
আজ ১৫ মার্চ, টেস্ট ক্রিকেটের জন্মদিন। ১৪৮ বছরে পা দিলো ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাট। ১৮৭৭ সালের এই দিনে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ইতিহাসের প্রথম অফিসিয়াল টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল। প্রথম সেঞ্চুরি, প্রথম উইকেট, প্রথম রান—সব কিছুর সূচনা হয়েছিল এই ম্যাচেই।
প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন চার্লস ব্যানারম্যান, করেছিলেন ১৬৫ রান। প্রথম উইকেট শিকার করেছিলেন অ্যালেন হিল। প্রথম ফিফটি করেছিলেন ইংল্যান্ডের হ্যারি ইয়ুপ। প্রথম পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন বিলি মিডউইন্টার। আর ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া, ৪৫ রানের ব্যবধানে।
প্রথমদিকে টেস্ট ম্যাচের দৈর্ঘ্যের নির্দিষ্ট সীমা ছিল না, কোনো কোনো ম্যাচ চলেছে ১২ দিন পর্যন্ত! পরে পাঁচ দিনের নিয়ম চালু হয়। সময়ের সঙ্গে নিয়মের পরিবর্তন হলেও টেস্ট ক্রিকেট তার আসল রূপ হারায়নি।
২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টির উত্থানের পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, টেস্ট ক্রিকেটের দিন শেষ। নব্বইয়ের দশকে ওয়ানডের জনপ্রিয়তার পরও একই কথা উঠেছিল। কিন্তু টেস্ট তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
২০২৪ সালেও টেস্ট ক্রিকেটের উত্তেজনা কমেনি। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি, অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফ্র্যাংক ওরেল ট্রফি, শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ড সিরিজ কিংবা বাংলাদেশ-পাকিস্তানের লড়াই—সব মিলিয়ে বছরটা ছিল টেস্টের।
আইসিসি ২০১৯ সালে চালু করেছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, যা টেস্টের জনপ্রিয়তা কিছুটা বাড়ালেও নতুন সংকটও তৈরি করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিস্তরী টেস্টের ধারণা এসেছে, যা বড় দল ও তুলনামূলক দুর্বল দলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে পারে। এতে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড নিজেদের মধ্যে বেশি ম্যাচ খেলবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ের মতো দলগুলোর টেস্ট খেলার সুযোগ কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ২৪ বছরে ১৫০ টেস্ট খেলেছে, জয় মাত্র ২২টিতে, হার ১১০টিতে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে উন্নতি করলেও টেস্টে এখনও দুর্বল।
তবে ইতিহাস বলে, টেস্ট ক্রিকেটের পতন কখনোই সহজ নয়। দেড়শো বছরের ঐতিহ্যের সামনে কোনো বাধাই এখনো টেস্টকে হারাতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে কি? সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা!
অনলাইন ডেস্ক







