Saturday, December 6, 2025

যশোরে ইউনিক ফোর্স লি. চাকরি দেয়ার নামে বেকারদের গলা কাটছে!(ভিডিও)

যশোরের চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়ে অবস্থিত ইউনিক ফোর্স লি. নামের একটি প্রতিষ্ঠান চাকরির নামে প্রতি মাসে বেকারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পত্রিকা ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রথমে বেকারদের অল্পদিনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বেকারত্বকে পুঁজি করে প্রতারণার ফাদে ফেলে সর্বস্বান্ত করছে সাধারণ যুবকদের। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চাঁচড়া ফাঁড়ি থেকে সামান্য দূরে প্রকাশ্যে এ ধরণের প্রতারণা চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের দ্রুত পদক্ষেপ কামনাও করা হয়েছে। সরেজমিন সোমবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক পরীক্ষায় ‘পাস’ করা এক প্রার্থীর অভিভাবক সেজে ওই প্রতিষ্ঠানে যেয়ে দেখা যায়, সুসজ্জিত বিশাল অফিস। রয়েছেন সাত আটজন কর্মী। কেউ পরীক্ষা নিচ্ছেন। আবার কেউ মক্কেলকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। রিসিপশনিস্ট আয়েশা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বসতে বলেন। জানান ভেতরে ইন্টারভিউ চলছে। বস ফ্রি হলেই ডেকে

ছেলের বৌয়ের চাকরির জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়ে চাকরি পাননি। চারমাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই এভাবে অপেক্ষারত থাকতে হয় পুলেরহাট গ্রামের কাশেমকে। ছবিটি  সোমবার দুপুরে তোলা।

নেয়া হবে। এসময় পাশের সোপায় বসে হা হুতাশ করতে দেখা যায় নতুনহাট এলাকার আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তিকে। সাথে ছিলেন তার ছেলের স্ত্রী সোনিয়া। আবুল কাশেম জানান, পুত্রবধূর মেডিকেলে চাকরি দেয়ার কথা ছিল। সেজন্য তারা ফরমের জন্য প্রথমে তিনশ’ টাকা নেন। পরে পরীক্ষার জন্য আরও সাড়ে ছয় হাজার টাকা দিতে হয়েছে। সর্বশেষ ওই কোম্পানিতে তিনি ৫০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু চাকরি না দিয়ে কোম্পানির লোকেরা নানা তালবাহানা শুরু করেছে। এক পর্যায়ে রোববার টাকা ফেরত দিতে চেয়েছিল, কিন্তু দেয়নি। সোমবার সকালে আসতে বলায় সকাল থেকেই টাকার জন্য বসে আছেন। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানের বস তার সাথে কথা বলছেন না। টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। আবুল কাশেমের অভিযোগ শেষ না হতেই পাশে বসে থাকা রেলগেট এলাকা থেকে চাকরি নিতে আসা আখি বেগম বলেন, তিনি এই প্রতিষ্ঠানে ১১ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি পাননি। এমনকি টাকাও ফেরত দেননি কর্তৃপক্ষ। অভিযোগকারীদের বক্তব্য ভিডিও করার সাথে সাথেই রিসিপশনিস্ট আয়েশা প্রতিবাদ শুরু করেন। অপর এক কর্মচারী এসে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন। কিছু সময় পর এ প্রতিবেদককে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে কথা হয় কোম্পানির অ্যাডমিন অফিসার আরিফুল ইসলামের সাথে। প্রার্থীর অভিভাবক শুনে প্রথমেই তিনি এ প্রতিবেদকের ওপর চড়াও হয়ে ওঠেন।

পুরো প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরার আওতাভূক্ত। পরিচালক শরিফুল ইসলাম তার রুমে বসে তা নিয়ন্ত্রণ করেন। সিসি ফুটেজেই এসব টাকা লেনদেনের সকল প্রমান মিলবে বলে ধারণা ভূক্তভুগীদের।

পরে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর আমতা আমতা শুরু করেন। বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আরিফুল ইসলাম কোনো উত্তর না দিয়ে আর একটি কক্ষে নিয়ে যান প্রতিবেদককে। সেখানে বসেছিলেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক উপশহর এলাকার এম আজিজ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ উদ্দীন আহম্মেদ। শুরুতেই মি. রিয়াজ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সন্মনীত ব্যক্তির নাম ভাঙাতে থাকেন।  এছাড়া, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া বসুন্দিয়ার কামাল হোসেন, বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের রায়হান উদ্দীন, ইমরান নাজির, সোহাগ হোসেন, যশোর শহরের বাবলাতলার মুক্তা খাতুনসহ আরও কয়েকজন ভুক্তোভোগীর সাথে কথা হয়। তারা জানান, এটি ইউনিক ফোর্স লি. এর প্রধান কার্যালয়। এছাড়াও ঝিনাইদহে রয়েছে এর শাখা অফিস। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অ্যাডমিন অফিসার, ম্যানেজার, গ্যানম্যান, রিক্রুটিং অফিসার, সিসি টিভি মনিটরিং অফিসার, সুপারভাইজার, প্রিমিয়ার পোস্টের নিরাপত্তাকর্মী, নারী নিরাপত্তাকর্মী, সিকিউরিটি গার্ড, রিসিপশনিস্ট, অফিস সহকারী, ক্লিনার পদে তারা ভায়া হয়ে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেন। আগ্রহীদের এসব পদে যোগদানের জন্য প্রথমে আবেদন করতে হয়। সেজন্য আবেদন ফি বাবদ প্রতিজনকে দিতে হয় তিনশ’ থেকে তিনশ’ ৫০ টাকা। যা অফেরতযোগ্য। এরপর তারা একটি মৌখিক পরীক্ষা নেন। যাতে কোনো ফেল নেই। সবাইকে পাস করিয়ে শুরু হয় দেনদরবার। এক্ষেত্রে যারা যত টাকা দেবে তাদেরকে সে অনুযায়ী ভালো চাকরির সুযোগ দেয়ার কৌশল নেয়া হয়। ভালো বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে দাবি করা হয় ছয় হাজার থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকা। প্রথম পর্যায়ে কিছু টাকা জামানত নিয়ে কনফার্ম করারও সুযোগের কথা বলা হয়। টাকা যা নেয়া হয় তা আর ফেরত দেয়া হয় না। হুমকি ধামকি দিয়ে টাকা হজম করা হয়। অভিযোগকারীরা আরও বলেন, সুসজ্জিত অফিসে মানুষ পটানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মার্কেটিং অফিসার পদে নিয়োগ দিয়ে মক্কেল ধরে আনা তাদের কাজ। কাজের ওপর কমিশন পান মার্কেটিং কর্মকর্তারা। রিসিপশনিস্ট আয়েশা খাতুন বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তিনিও বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির জন্য এসেছিলেন। টাকা দিয়ে এখন তিনিই লোক ঠকানোর কাজে যোগ দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, প্রতিদিন এ প্রতিষ্ঠানে ১০ থেকে ১৫ জন চাকরি প্রত্যাশী ফরম পূরণ করেন। যাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে তিনশ’ থেকে তিনশ’ ৫০ টাকা করে হাতানো হয়। ১০ জন করে হলেও মাসে ২৬ দিনে অন্তত ৭৮ হাজার টাকা উপার্জন হয় শুধু ফরম থেকেই। এরপর পরীক্ষাসহ নানা উছিলায় প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতানো হয়। অথচ সর্বশেষ দু’মাসে এক জনকেও চাকরি দিতে পারেনি ইউনিক ফোর্স লি.। এটি স্বীকারও করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ উদ্দীন আহম্মেদ। তিনি দাবি করেন, করোনার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিয়োগ দেয়া সম্ভাব হয়নি। তবে, কেন এ ধরনের চাকরির বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন এর উত্তর তিনি দিতে পারেন নি।

বিশেষ প্রতিনিধি

(ভিডিও দেখতে এই লিংকে ক্লিক করুন)

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর