Sunday, April 27, 2025

নবীজি (সা.) যে আমল করতে বলেছেন, যা বদলে দেবে জীবন

ইসলাম শুধু একটি ধর্ম নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ রেখে গেছেন। তিনি এমন কিছু আমল করতে বলেছেন, যা শুধু আখিরাতের জন্য নয়, বরং দুনিয়াতেও সফলতা বয়ে আনে। আজ আমরা এমন কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করব, যা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া

নামাজ ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। এটি আত্মশুদ্ধি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মহানবী (সা.) বলেছেন, “নামাজ দ্বীনের স্তম্ভ” (তিরমিজি)। যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন, তাদের হৃদয়ে প্রশান্তি নেমে আসে এবং জীবন বরকতময় হয়।

২. সকাল ও সন্ধ্যায় দোয়া করা

নবীজি (সা.) বিভিন্ন সময় দোয়া পড়তে বলেছেন, যা জীবনের কল্যাণ বয়ে আনে। বিশেষ করে সকালে এবং রাতে কিছু দোয়া রয়েছে, যা পড়লে দিনটি শান্তিময় ও সুরক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ,

আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন…

এই দোয়া পড়লে দিন বরকতময় হয় এবং বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

৩. তহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা

তহাজ্জুদ নামাজ পড়া একটি বিশেষ আমল, যা রাতের গভীরে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করে। এটি নবীজি (সা.)-এর অত্যন্ত প্রিয় আমলগুলোর একটি ছিল। কুরআনে বলা হয়েছে:

“রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদের জন্য নির্ধারিত করো, এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত নেকি এবং আল্লাহ তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উত্তোলন করবেন।” (সূরা আল-ইসরা: ৭৯)

৪. প্রতিদিন কিছু কুরআন তিলাওয়াত করা

কুরআন শুধু পাঠের জন্য নয়, এটি হৃদয়ের শুদ্ধি, সঠিক পথের দিশা ও বরকতের উৎস। মহানবী (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।” (বুখারি)

৫. দরুদ শরিফ পড়া

নবীজির (সা.) প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হলো দরুদ পড়া। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার জন্য দশটি রহমত প্রেরণ করবেন।” (মুসলিম)

৬. হাসিমুখে কথা বলা ও সদকা করা

নবীজি (সা.) বলেছেন, “তোমার হাসিমুখও একটি সদকা।” (তিরমিজি) এছাড়াও, গরীবদের সাহায্য করা, অভাবীদের পাশে দাঁড়ানো এবং সদকা-খয়রাত করা জীবনের বরকত বৃদ্ধি করে।

৭. অভিভাবকদের সাথে সদ্ব্যবহার করা

আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্যতম মাধ্যম হলো পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার। নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার পিতামাতার প্রতি সদয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেন।” (তিরমিজি)

৮. প্রতিদিন ইস্তিগফার করা

গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ উপায় হলো ইস্তিগফার করা। নবীজি (সা.) প্রতিদিন অন্তত ৭০ বার ইস্তিগফার করতেন। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করে, আল্লাহ তার সব সংকট দূর করে দেন এবং রিজিকের দুয়ার খুলে দেন।” (আবু দাউদ)

৯. সত্য কথা বলা ও আমানতদার হওয়া

সত্যবাদিতা ইসলামের অন্যতম মূলনীতি। নবীজি (সা.) বলেছেন, “সত্য তোমাকে ন্যায়ের দিকে নিয়ে যাবে এবং ন্যায় তোমাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে।” (বুখারি)

১০. প্রতিবেশীর প্রতি দয়া দেখানো

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর ক্ষতি করে, সে আমার উম্মত হতে পারে না।” (মুসলিম)

এই ছোট ছোট আমলগুলো যদি আমরা আমাদের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করি, তাহলে আমাদের জীবন বদলে যেতে বাধ্য। এগুলো শুধু দুনিয়ার শান্তির জন্য নয়, বরং আখিরাতের সাফল্যের জন্যও অপরিহার্য। নবীজি (সা.) আমাদের জন্য যে পথ দেখিয়েছেন, সে পথেই রয়েছে প্রকৃত মুক্তি ও কল্যাণ।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর