Friday, December 5, 2025

ভেজাল নিম্নমানের গুড়ের কারখানায় অভিযান

আঃ সবুর আল আমিন, কপিলমুনি (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার পাইকগাছার নাছিরপুর পালপাড়ায় অবস্থিত কিছু কারখানায় প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ভেজাল খেজুর ও আখের গুড় উৎপাদিত হচ্ছে। গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত আমদানি করা চিনির সিরা, ক্ষতিকর রং ও বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করে এসব গুড় তৈরি করা হচ্ছে। যা খেয়ে সাধারণ মানুষ পেটের পীড়া থেকে শুরু করে কিডনি ও লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বুধবার সকালে এসব ভেজাল গুড় তৈরির সত্যতা পাওয়ায় দুই ব্যবসায়ীকে ভোক্তা অধিকার আইন, ২০০৯ এর অধীনে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইফতেখারুল ইসলাম শামীম। এ সময় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানাগুলো অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে গড়ে উঠেছে। স্যাতসেঁতে ও নোংরা স্থানে বিষাক্ত কেমিক্যাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কারখানার শ্রমিকরা সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে আলামত লুকানোর চেষ্টা করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে চক্রটি ব্যাপকহারে কৃত্রিম গুড় উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবের সুযোগ নিয়ে এসব কারখানার মালিকরা দেদারসে ভেজাল গুড় তৈরি করে চলেছেন।

গুড়ের বাজারদর বেশি হওয়ায় চক্রটি ইন্ডিয়ান এলসি’র মাধ্যমে আমদানি করা গো-খাদ্যের নিম্নমানের চিনির সিরা, ক্ষতিকর রং ও রাসায়নিক মিশিয়ে গুড় তৈরি করছে। এতে প্রতি কেজিতে ৫০ টাকার বেশি লাভ করছে তারা। এসব গুড়ে ব্যবহৃত হয় সোডিয়াম হাইড্রো-সালফাইট (হাইড্রোজ), ফিটকিরি ও চুন। এসব উপাদান মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাহের বলেন, “এসব ভেজাল গুড় খেলে কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে যেতে পারে, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। শিশুদের বুদ্ধির বিকাশও ব্যাহত হয়। দীর্ঘদিন এসব গুড় খেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সাময়িক শাস্তি দেওয়া হলেও স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ না নিলে চক্রটি আবারও একই কাজে লিপ্ত হবে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন তারা। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইফতেখারুল ইসলাম শামীম জানিয়েছেন, “জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর