যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরের ক্যান্টিনের নামে চলছে রমরমা বাণিজ্য পণ্যের মনগড়া দাম নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী মুল্য তালিকা টাঙানোর নিয়ম থাকলেও ধার ধারছেনা কর্তৃপক্ষ। কয়েকমাস আগেও মূল্য তালিকার বোর্ড ওই ক্যান্টিনে ছিল। অজ্ঞাত কারণে তা কেনো নেই এর উত্তর জানেনা কেউই। দেয়া হচ্ছেনা পণ্যের ক্রয় রশিদ। এ সুযোগে ক্যান্টিন থেকে পণ্যের ইচ্ছেমত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সোমবার সরেজমিন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরের ক্যান্টিনে যেয়ে দেখা যায় স্বজনদের হা-হুতাশ। বেনাপোল থেকে আসা মনিরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্যান্টিনের পণ্যে যে দাম নেয়া হচ্ছে তা কোথাও নেই। এটা অন্যায় বলে দাবি করেন তিনি। তার অভিযোগের সাথে একত্মতা প্রকাশ করেন ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা এক বন্দির মা জুলেখা খাতুনসহ আরও কয়েকজন। পরে ক্যান্টিনে যেয়ে সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে ক্রেতা সেজে কথা হয় ম্যানেজার ফারুক হোসেনের সাথে। জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিভিন্ন পণ্যের দাম জানান। তার কাছে দাম শুনে কারাগারের প্রধান গেটের সামনের রাকিব স্টোরে যেয়ে একই পণ্যের দাম জানতে চাওয়া হয়। দোকানের মালিক রাকিবও ওই সব পণ্যের দাম জানান। কারাগারের ভেতর আর বাইরে অর্থাৎ এক পাচিলের ভেতরে-বাইরে পণ্যের দামের আকাশ আর পাতাল পার্থক্য। কারাগারে ব্যানসন সিগারেটের প্যাকেটের দাম জানানো হয় দুশ’ ৯০ টাকা। অথচ গেটের সামনের দোকানে দুশ’৬০। অর্থাৎ ৩০ টাকা বেশি। কারাগারে গোল্ডলিফ সিগারেটের প্যাকেট দুশ’ ২০ টাকা নেয়া হলেও বাইরে দাম একশ’ ৯০ টাকা। ক্যান্টিনে ডার্বি সিগারেটের প্যাকেট ৫০ টাকা বিক্রি করা হলেও বাইরের দোকানে ৪০ টাকা। শেখ সিগারেটের প্যাকেট ক্যান্টিনে ৫০ টাকা, বাইরে ৪০ টাকা, চিড়ার কেজি ক্যান্টিনে ৭০ টাকা, বাইরে ৪৫ টাকা, পিঁয়াজের কেজি ক্যান্টিনে ৯০ টাকা, বাইরে ৪৫ টাকা, মুড়ির কেজি ক্যান্টিনে ৯০. বাইরে ৭০ টাকা,। এছাড়া ক্যান্টিনে আপেল একশ’ ৪০ টাকা কেজি, বাইরে একশ’ ২০ টাকা, ক্যান্টিনে কমলালেবু একশ’ ৩০ টাকা ও পেয়ারা ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও বাইরে কমলা একশ’ টাকা ও পেয়ারা ৭০ টাকা কেজি। সরেজমিনে প্যাকেট জাত বিস্কুট, কেক, চিপসসহ আরও কয়েকটি পণ্য প্যাকেটের নির্ধারিত দাম নেয়া হচ্ছে বলে দেখা গেছে।এ বিষয়ে কারাগার ক্যান্টিনের ম্যানেজার ফারুক হোসেনের কাছে দাম বেশি নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে এ দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এখন মূল্য তালিকা নেই কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাত দিন হয়েছে তিনি ম্যানেজারের দায়িত্ব পেয়েছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর কোনো মূল্য তালিকা বোর্ড তিনি পাননি। এ বিষয়ে বন্দির স্বজন যশোর রেলগেট এলাকার আব্দার রহমান জানান, তার সন্তান দু’ মাসের বেশি জেলখানায় আছেন। সপ্তাহে দু’দিন তিনি সন্তানকে দেখতে আসেন। কিন্ত, ক্যান্টিনের লাগামহীন দামে তিনি অতিষ্ট বলে জানান। প্রতিবাদ করলে যদি ছেলের কোনো সমস্যা হয় সেজন্য তিনি প্রতিবাদ করেন না। স্থানীয়রা বলছেন, কারা কর্তৃপক্ষ মনগড়া টাকা নিতেই এ কৌশল অবলম্বন করেছে। আগে বাইরের খাবার গ্রহণ করতেন। এখন সে নিয়ম বন্ধ করে কারাক্যান্টিন থেকে খাবার কেনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া মূল্য তালিকা সরিয়ে ফেলা আরও একটি কৌশল। এতে সহজসরল মানুষদের ঘাড় ভাঙা সহজ হচ্ছে। রশিদ না দেয়াটা সবচেয়ে বড় কৌশল। ফলে কারা কর্তৃপক্ষের দুর্র্নীতির আর কোনো প্রমাণই রাখছেন না। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, কারাগারে কোনো পণ্যের মূল্য বেশি নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ নিয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ভেতরের ক্যান্টিনে মূল্য তালিকা টাঙানো আছে বলে তিনি জানেন। তবে বাইরের ক্যান্টিনে মূল্য তালিকা নেই-তা তার অজানা। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দেন মি. তুহিন।
বিশেষ প্রতিনিধি







